
ছবি: সংগৃহীত।
জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের একটি বড় উৎস হচ্ছে ভুল বুঝিয়ে বা প্রভাব খাটিয়ে সম্পত্তির হেবা (দান) নেওয়া। বিশেষ করে পিতার জীবদ্দশায় কোনো সন্তান যদি কৌশলে বা মানসিক চাপে জমি নিজের নামে হেবা দলিল করে নেয়, তবে পরবর্তীতে বাবা সেই জমি ফেরত নিতে পারবেন কি না—এই প্রশ্ন অনেকের মনে।
হেবা কী?
ইসলামি আইন অনুযায়ী ‘হেবা’ অর্থ হলো কাউকে কোনো কিছু স্বেচ্ছায় দান করে দেওয়া। এটি হতে হবে স্পষ্ট, স্বতঃস্ফূর্ত ও নিঃস্বার্থভাবে। হেবা তখনই পূর্ণ হয় যখন তিনটি বিষয় ঘটে:
১. দানদাতা স্বেচ্ছায় সম্পত্তি দান করেন,
২. প্রাপক তা গ্রহণ করেন,
৩. এবং তাকে হস্তান্তর বা দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ভুল বুঝিয়ে নেওয়া হেবা কি বৈধ?
না। ইসলামি শরিয়াহ ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী, প্রতারণা বা ভুল বুঝিয়ে নেওয়া হেবা বৈধ নয়। যদি প্রমাণ হয় যে পিতাকে মানসিক চাপে ফেলে, ভুল তথ্য দিয়ে বা বুঝতে না দিয়েই কোনো সন্তান হেবা দলিল করিয়ে নিয়েছে—তাহলে সেই হেবা বাতিলযোগ্য।
হেবা কি বাতিল করা যায়?
সাধারণভাবে ইসলামে হেবা একবার দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়া নিন্দনীয়, তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্তে তা বাতিলযোগ্য। যেমন:
-
যদি হেবা গ্রহণকারী সন্তান অবিচার করে বা অকৃতজ্ঞ আচরণ করে,
-
যদি হেবা নেওয়ার সময় প্রতারণা বা চাপ প্রয়োগের প্রমাণ থাকে,
-
অথবা হেবা করার পর যদি দানদাতা মনে করেন তিনি ভুল করেছেন।
আইনি প্রক্রিয়া কী?
বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক আইন ও দেওয়ানি আইনের আওতায় হেবা বাতিলের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যায়:
১. নোটিশ প্রদান: প্রথমে আইনজীবীর মাধ্যমে হেবা বাতিলের নোটিশ দিতে হয়।
২. মামলা দায়ের: প্রয়োজন হলে সিভিল কোর্টে হেবা বাতিলের মামলা করতে হয়।
৩. প্রমাণ: আদালতে হেবা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রতারণা বা ভুল বোঝানোর প্রমাণ তুলে ধরতে হয়।
বাস্তব চিত্র
অনেক সময় দেখা যায়, বাবা তার ছেলেকে জমির দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গিয়ে দলিলে হেবা লিখে দেন, অথচ পরে বুঝতে পারেন এটি ছিল স্থায়ী দান। আবার কেউ কেউ মাত্র একটি কাগজে সই করে, পরে জানতে পারেন সেটি হেবা দলিল। এই ধরণের প্রতারণা প্রতিরোধে সচেতনতা ও আইনি সহায়তা নেওয়া জরুরি।
জমির হেবা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি, প্রতারণা বা অনিচ্ছাকৃত দান একটি জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়। আইন অনুযায়ী, প্রতারণামূলক হেবা বাতিল করা যায়—তবে সঠিক প্রক্রিয়া ও প্রমাণ ছাড়া নয়। তাই এমন কোনো কাগজে সই দেওয়ার আগে সবদিক ভালোভাবে যাচাই করা উচিত, বিশেষ করে পরিবারিক সম্পত্তির বেলায়।
নুসরাত