ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ জুলাই ২০২৫, ৯ শ্রাবণ ১৪৩২

শেরপুর ও গারো পাহাড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কলাই চাষ

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০২:২৪, ২৪ জুলাই ২০২৫

শেরপুর ও গারো পাহাড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কলাই চাষ

ছবি: জনকণ্ঠ

শেরপুর জেলার চরাঞ্চল ও গারো পাহাড়ের সীমান্ত এলাকায় এক সময় জনপ্রিয় মৌসুমি ফসল ছিল কলাই। কম খরচ, স্বল্প সময় ও ভালো লাভের কারণে কৃষকেরা বছরের পর বছর ধরে মুগ, মাসকলাই, খেসারি ও ছোলার মতো কলাইজাত ডালশস্য চাষ করতেন। তবে বর্তমানে এই ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে শেরপুর জেলায় মাসকলাই চাষ হচ্ছে মাত্র ১৩০ হেক্টরে, খেসারি ২৫ হেক্টরে এবং মুগকলাই ২৭ হেক্টরে। অথচ আগের বছরগুলোতে এই সংখ্যাগুলো ছিল বহু গুণ বেশি। হুমায়ুন কবির জানান, শুধু ডাল ও খাবারের জন্যই নয়, কলাইজাত শস্য জমির উর্বরতা বাড়ায়। প্রতি বিঘা জমিতে চাষের পর ৬ থেকে ৮ কেজি নাইট্রোজেন সমতুল্য জৈব উপাদান মাটিতে জমা পড়ে। এটি পরবর্তী চাষের জন্য বড় সহায়ক।


তবে মাঠপর্যায়ের কৃষকরা জানান, বারবার লোকসানের মুখে তারা কলাই চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তারা বলেন, “আমরা পরিশ্রম করে ফসল তুলি, কিন্তু বাজারে দাম থাকে না। হঠাৎ করেই দাম পড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা, লাভ করে অন্য কেউ।
তাদের অভিযোগ, বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা না থাকায় উৎপাদক কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ নিজ পরিবারে ডালের প্রয়োজন মেটাতে এক সময় তারা নিজের প্রয়োজনে মাষকলাই, মুগ, ছোলা বা খেসারির চাষ করতেন। বর্তমানে সে অভ্যাসও ক্রমে বিলুপ্তির পথে।
শেরপুরের কৃষি অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে স্থানীয় জলবায়ু উপযোগী ও মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিকারী এই ধরনের শস্যের আবাদে পুনরায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। নীতিনির্ধারক, কৃষি বিভাগ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই হারানো ঐতিহ্য হয়তো আর ফিরে আসবে না।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, এক দশক আগেও পাহাড়ি উপজেলা ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীসহ চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে কলাই চাষ হতো। এখন সে জমিতে ড্রাগন, পেয়ারা, মাল্টা, কুলসহ উচ্চমূল্যের ফলের চাষ বেড়ে গেছে। একইভাবে চরাঞ্চলের নীচু জমিতে ধান চাষের দিকে কৃষকের ঝোঁক বেশি, ফলে ডালশস্য ক্রমেই গুরুত্ব হারাচ্ছে।

সাব্বির

×