ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার ইরানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইসরায়েলি সেনা গ্রেপ্তার, তদন্তে চাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৫ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৪:৪৮, ২৫ জুলাই ২০২৫

এবার ইরানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইসরায়েলি সেনা গ্রেপ্তার, তদন্তে চাঞ্চল্য

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে এক সেনার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই সেনা ইরানি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থের বিনিময়ে গোপন তথ্য সরবরাহ করেছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রসিকিউশন বিভাগ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) নিশ্চিত করেছে যে, অভিযুক্ত সেনার বিরুদ্ধে “বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ এবং শত্রুর কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ” করার অভিযোগে আনুষ্ঠানিক মামলা করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সেনাটি যেসব তথ্য সরবরাহ করেছেন, সেগুলো খুব বেশি শ্রেণিবদ্ধ না হলেও গুরুত্বপূর্ণ—যেমন ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থানগুলোর ছবি এবং প্রতিরক্ষা ইন্টারসেপটরের কার্যক্রমের একটি ভিডিও।

এই তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে গত মাসে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের আগ্রাসনের সময়, যখন তেলআবিব সরকার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থানগুলো গোপন রাখার চেষ্টা করছিল।

গ্রেপ্তার অভিযানটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে ইসরায়েলি পুলিশ, শিন বেত (Shin Bet) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, এবং লাহাভ ৪৩৩ (Lahav 433) অপরাধ ইউনিট

জানা গেছে, সেনাটিকে অন্তত আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত রিমান্ডে রাখা হবে এবং তদন্ত চলমান থাকবে।

এছাড়াও, একই দিনে নেগেভ এলাকার ৩৩ বছর বয়সী এক শিক্ষককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অর্থের বিনিময়ে ইরানি এজেন্টদের নির্দেশে বিভিন্ন কাজ করেছেন।

এই ঘটনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতায় আগ্রহী ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে এবং দেশটির গোয়েন্দা কাঠামো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলি সরকার বুধবার “সহজ টাকা, কঠিন মূল্য” শিরোনামে একটি প্রচারণা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতা না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। রেডিও, ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রচারণার উদ্দেশ্য, “ইসরায়েলি বসতকারীদের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সহযোগিতার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং যারা নিরাপত্তা মিশনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের সতর্ক করা।”

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এসব মিশনের মধ্যে ছিল গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ছবি তোলা, নকল অস্ত্র পরিবহন এবং টার্গেট চিহ্নিত করে হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রস্তুত করা।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভক্তির কারণে ইসরায়েলের ভেতরে অসন্তোষ বাড়ছে, যা অনেককে ইরানের সঙ্গে গোপনে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

শিন বেত এবং ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, গত এক বছরে ইরানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ২৫টির বেশি নিয়োগ প্রচেষ্টা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ৩৫ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এই গ্রেপ্তার-তালিকা সামনে এল মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর, যখন গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে অপ্রস্তুত ও বেআইনি সামরিক আগ্রাসন চালায় এবং এতে ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।

এর পাল্টা জবাবে, ইরান সুনির্দিষ্ট ও ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের সামরিক ও শিল্প অবকাঠামোর ওপর। এরপরই তেলআবিব ২৪ জুন একটি যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়।

ইমরান

×