
.
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে অবরোধের কারণে সেখানে মানবসৃষ্ট গণদুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টেড্রোস বলেন, আমি জানি না একে আর কী বলা যায়। এটি মানবসৃষ্ট গণদুর্ভিক্ষ এবং সেটা অত্যন্ত স্পষ্ট। এই পরিস্থিতি অবরোধের কারণেই হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনটি জেনেভা থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষ। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইলি আগ্রাসনে ভূখন্ডটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়াল ৫৯ হাজার ৫০০। খবর আলজাজিরার।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালকের মন্তব্য এমন সময়ে এলো যখন শতাধিক আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা গাজায় চরম খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কতা জানায়। অথচ টনকে টন খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ গাজার ঠিক বাইরে অপ্রবেশযোগ্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে অন্তত ২১ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে এই সংখ্যা বরফের চূড়ামাত্র, আসল সংখ্যাটা অনেক বড় হতে পারে। ডব্লিউএইচও আরও জানিয়েছে, অপুষ্টি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো পূর্ণ। অথচ জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্তসামগ্রী নেই। ত্রাণ সরবরাহের চেইন ভেঙে পড়া ও প্রবেশে বাধার কারণে এই দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। টেড্রোস জানান, জাতিসংঘ ও তাদের সহযোগী সংস্থাগুলো মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে প্রায় ৮০ দিন কোনো খাদ্য সরবরাহই করতে পারেনি এবং এখন যে সরবরাহ শুরু হয়েছে, সেটিও যথেষ্ট নয়। ডব্লিউএইচও এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন, পরিস্থিতি চরম সংকটজনক। তাদের স্ক্রিনিংয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মারাত্মক বা মাঝারি মাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছেন এবং ২০ শতাংশ পর্যন্ত গর্ভবতী নারীও অপুষ্টির শিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফিলিস্তিনি অধিকৃত অঞ্চলের প্রতিনিধি রিক পেপারকর্ন জানান, শুধুমাত্র জুলাই মাসেই ৫১০০ শিশু অপুষ্টি নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ জন মারাত্মক কৃশকায় অবস্থায় ছিল। অক্টোবর ২০২৩ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, গত মার্চে ইসরাইল গাজায় সব ধরনের সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। মে মাসে অবরোধ আংশিকভাবে তুলে নেওয়া হলেও, সেখানে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কারণ হিসেবে ইসরাইল বলছে গোষ্ঠীগুলোর হাতে ত্রাণ চলে যাওয়া রোধ করতে এই নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
প্যানেল