ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

যে ওষুধে ভরসা করেছিলেন, সেটিই বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি! নতুন গবেষণায় প্রকাশ

প্রকাশিত: ১৫:০৭, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৫:০৮, ২৬ জুলাই ২০২৫

যে ওষুধে ভরসা করেছিলেন, সেটিই বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি! নতুন গবেষণায় প্রকাশ

ছবি: সংগৃহীত।

টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বহু মানুষের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রতিদিনের কাজ। এই নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে বহু ওষুধ ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে একটি জনপ্রিয় নাম হলো সালফোনিলইউরিয়া গ্রুপের ওষুধ গ্লিপিজাইড। যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশে ব্যবহৃত এই ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে সস্তা এবং কার্যকর বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে। তবে সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় এই বহুল ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে হৃদরোগের বাড়তি ঝুঁকির সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা।

গ্লিপিজাইড: পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য, কিন্তু এখন প্রশ্নের মুখে:
গ্লিপিজাইড মূলত সালফোনিলইউরিয়া গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে মেটফর্মিন একা যথেষ্ট না হলে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয় দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে। এর সস্তা দাম ও সহজলভ্যতা এই ওষুধকে বহু মানুষের জন্য নির্ভরযোগ্য করে তোলে।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্লিপিজাইড ব্যবহারকারীদের মধ্যে হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, হৃদ্‌পিণ্ড বিকল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং হৃদ্‌জনিত মৃত্যুর ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। এই গবেষণায় প্রায় ৪৮,০০০ ব্যক্তি অংশ নিয়েছিলেন।

পরিসংখ্যান যা চিন্তার উদ্রেক করে:
গবেষণায় গ্লিপিজাইডের পাশাপাশি গ্লাইমেপিরাইড, গ্লাইবিউরাইড এবং নতুন প্রজন্মের ডিপিপি-৪ ইনহিবিটর ওষুধের সাথে তুলনা করা হয়। যা উঠে এসেছে—

পাঁচ বছর ব্যবধানে গ্লিপিজাইড গ্রহণকারীদের ৯.১%-এর মধ্যে বড় ধরনের হৃদ্‌রোগ দেখা যায়, যেখানে ডিপিপি-৪ ইনহিবিটর গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ৮.১%।

গ্লিপিজাইড ব্যবহারে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ১৩% বেশি বলে উঠে এসেছে।

গ্লাইমেপিরাইড (৮.৬%) ও গ্লাইবিউরাইড (৮.৪%) ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি কিছুটা বেশি, তবে তা পরিসংখ্যানগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই মেটফর্মিন ব্যবহারের পর দ্বিতীয় ওষুধ হিসেবে গ্লিপিজাইড নিচ্ছিলেন। তাদের অধিকাংশই উচ্চ ঝুঁকির হৃদরোগী ছিলেন না, বরং সাধারণ ডায়াবেটিস রোগী।

সংখ্যার বাইরেও গুরুত্ব রয়েছে:
গবেষকরা সরাসরি বলেননি যে গ্লিপিজাইড হৃদরোগের কারণ, বরং এটিকে সম্ভাব্য “যোগসূত্র” বা সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে হৃদ্‌যন্ত্র এমনিতেই চাপে থাকে। সেখানে কোনো ওষুধ যদি আরও সামান্য হলেও সেই ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে, তবে সেটি চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

সস্তার মূল্য হতে পারে বড়
সালফোনিলইউরিয়া জাতীয় ওষুধ সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয় তাদের সস্তা দামের কারণে। ডিপিপি-৪ ইনহিবিটরের মতো নতুন ওষুধগুলো তুলনামূলক ব্যয়বহুল হলেও হৃদ্‌রোগের দিক থেকে বেশি নিরাপদ।

এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ওঠে—চিকিৎসার সিদ্ধান্ত কি শুধুমাত্র খরচের ওপর নির্ভর করা উচিত, নাকি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার?

এই গবেষণা সেই দিকেই ইঙ্গিত করে—রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও চিকিৎসকদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি, রোগীর জীবনমান, এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিবেচনা করে ওষুধ নির্ধারণ করা উচিত।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পরিবারগুলোর জন্য বার্তা:
এই গবেষণা আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়। গ্লিপিজাইড এখনও অনুমোদিত ও কার্যকর ওষুধ। তবে ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। প্রতিটি রোগীর জন্য চিকিৎসা ভিন্ন হতে পারে, এবং হৃদরোগের মতো নীরব ঝুঁকি বিবেচনায় না এনে ওষুধ নির্বাচন করলে সমস্যা হতে পারে।

এই গবেষণা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, পুরনো ওষুধগুলোকেও নতুন চোখে দেখা জরুরি, বিশেষ করে যখন আরও নিরাপদ বিকল্প হাতে আছে।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।

মিরাজ খান

×