ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

কনটেন্ট ক্রিয়েটর বনাম সাংবাদিকতা: তথ্যের দায়িত্ব কার?

সৈয়দ আমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০০:১৭, ২৭ জুলাই ২০২৫

কনটেন্ট ক্রিয়েটর বনাম সাংবাদিকতা: তথ্যের দায়িত্ব কার?

“ফেসবুকে দেখলাম এই ঘটনা ঘটেছে।” “ইউটিউবের এক ভাইয়ের ভিডিওতে সব ডিটেইলস আছে।” “গণমাধ্যম তো এখন সব লুকায়।” আমরা প্রায়ই এমন মন্তব্য শুনে থাকি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ানো হাজারো তথ্য, ছবি আর ভিডিও যেগুলোর উৎস একেক সময় একেকজন ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’। কেউ রিপোর্ট করছেন রাস্তার কাজে দূর্নীতির বিরুদ্ধে, কেউ আবার লাইভে যাচ্ছেন কোনো দুর্ঘটনার খবর নিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন হলো - এই তথ্যগুলো কতটা সত্য? আর সত্য না হলে দায় কার?

বর্তমানে ইউটিউব, ফেইসবুক লাইভ এবং রিলসভিত্তিক কনটেন্ট ক্রিয়েটররা অনেকেই নিজেকে সংবাদকর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। অনেকে আবার পরিচয় দিচ্ছেন 'সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট' হিসেবেও। তারা খুব দ্রুত, তাৎক্ষণিক এবং আবেগনির্ভর কনটেন্ট বানাচ্ছেন। যেটা ভাইরাল হচ্ছে এবং আলোড়ন তুলছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠে - এই তথ্য যাচাই করছে কে? একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর কি জানেন একটি ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার সামাজিক প্রভাব কত বড় হতে পারে?

সাংবাদিকতা একটি নীতিনিষ্ঠ পেশা। যার মূল ভিত্তি হলো তথ্যের নির্ভুলতা, পক্ষপাতহীনতা ও জনস্বার্থে দায়বদ্ধতা। একজন পেশাদার সাংবাদিক একটি খবর প্রকাশের আগে এর উৎস যাচাই করেন, দুপক্ষের বক্তব্য নেন, নীতিমালা মেনে চলেন এবং আইনের সীমারেখায় থাকেন। প্রশিক্ষণ, সম্পাদকের তত্ত্বাবধান, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা - সব মিলিয়ে সাংবাদিকতার একটি কাঠামো রয়েছে। এতে ভুল হলেও দায় গ্রহণের জবাবদিহিতা থাকে।

একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হয়তো কোনো ঘটনা দেখে ফেসবুক লাইভে যান, নিজস্ব মতামত দেন ও আবেগে উদ্বেল হন। কিন্তু সাংবাদিকের কাজ ঘটনার পেছনের সত্য উদঘাটন। লাইভ নয় বরং প্রমাণ ও প্রেক্ষাপটই তাঁর মূল হাতিয়ার।

কনটেন্ট ক্রিয়েটরের উদ্দেশ্য হতে পারে জনপ্রিয়তা বা মনিটাইজেশন। আর সাংবাদিকের উদ্দেশ্য তথ্য পরিবেশন। একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর কোনো এডিটর বা নীতিমালার দায়ে আবদ্ধ নন, সাংবাদিক জবাবদিহিতার কাঠামোর মধ্যে থাকেন।

বাংলাদেশে ডিজিটাল লিটারেসি এখনো সীমিত। অনেক দর্শক বুঝতে পারেন না কোনটি সংবাদ আর কোনটি মতামতনির্ভর কনটেন্ট। ফলে ভাইরাল ভিডিও মানেই অনেকের কাছে ‘সত্য’ হয়ে দাঁড়ায়। তথ্য গ্রহণে সচেতনতা, সোর্স যাচাইয়ের অভ্যাস, এবং কনটেন্ট ও সাংবাদিকতার পার্থক্য বোঝা - এগুলো প্রতিটি দর্শকের জন্য জরুরি।

একটি সমাজে তথ্যের শক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটি সঠিক না হলে নীতিবোধ, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র সবই বিপন্ন হয়। কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের উচিত নিজেদের প্রভাবের গুরুত্ব বোঝা। সাংবাদিকদের উচিত তথ্যের গভীরতায় যাওয়ার পাশাপাশি আস্থার জায়গা বজায় রাখা। আর দর্শকদের উচিত ভাইরাল মানেই সত্য নয় এই মনোভাব নিয়ে কনটেন্ট গ্রহণ করা। তথ্য এখন হাতের মুঠোয়, কিন্তু দায়িত্ব যেন হাতছাড়া না হয়।

 

লেখকঃ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম

কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা।

 

রিফাত

×