ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

এই ৩ খাবার এখনই বাদ দিন, নইলে চুপিচুপি লিভার নষ্ট হচ্ছে!

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

এই ৩ খাবার এখনই বাদ দিন, নইলে চুপিচুপি লিভার নষ্ট হচ্ছে!

ছবি: সংগৃহীত

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন, হজমে সাহায্য করা, পুষ্টি সঞ্চয় করা এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করার মতো অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের দৈনন্দিন কিছু খাদ্যাভ্যাস অজান্তেই লিভারের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে। লিভারের সমস্যাকে অনেক সময় 'নীরব ঘাতক' বলা হয়, কারণ এর লক্ষণগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে বোঝা যায় না। যখন বোঝা যায়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

লিভার নষ্টের জন্য দায়ী ৩টি প্রধান খাবার যা এখনই বাদ দেওয়া উচিত:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু খাবার সরাসরি লিভারের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস, এমনকি সিরোসিসের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। নিচে সেই ৩টি প্রধান খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. অতিরিক্ত চিনি এবং চিনিযুক্ত পানীয়:

কেন ক্ষতিকর: আমরা জানি যে অতিরিক্ত চিনি ডায়াবেটিসের কারণ, কিন্তু এটি লিভারের জন্যও মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে। চিনিতে থাকা ফ্রুক্টোজ সরাসরি লিভার দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয়। যখন আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি গ্রহণ করেন, তখন লিভার এই অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজকে চর্বিতে রূপান্তরিত করে জমা করে। এই চর্বি লিভারে জমতে জমতে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) তৈরি করে। সময়ের সাথে সাথে এটি লিভারের কোষগুলোকে স্ফীত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত করে। মিষ্টি পানীয় যেমন - সফট ড্রিঙ্কস, প্যাকেটজাত ফলের রস এবং এনার্জি ড্রিঙ্কস - এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি থাকে, যা 'তরল বিষ' হিসেবে লিভারের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। এমনকি 'ডায়েট সোডা'-তেও থাকা কৃত্রিম মিষ্টি লিভারের ক্ষতি করতে পারে।

কী করবেন: যতটা সম্ভব চিনি এবং চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। সাধারণ পানি, গ্রিন টি, বা ব্ল্যাক কফি পান করার অভ্যাস করুন। মিষ্টি খাবারের পরিবর্তে ফলমূল খান।

২. গভীর তেলে ভাজা এবং ফাস্ট ফুড:

কেন ক্ষতিকর: আলু ভাজা (ফ্রেঞ্চ ফ্রাই), বার্গার, পিৎজা, চিকেন ফ্রাই, চিপস ইত্যাদি ফাস্ট ফুড এবং গভীর তেলে ভাজা খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এই ফ্যাটগুলো লিভারে সহজে হজম হয় না এবং চর্বি হিসেবে জমা হতে থাকে, যা ফ্যাটি লিভারের কারণ। এছাড়াও, এই খাবারগুলোতে প্রায়শই উচ্চ মাত্রার লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহৃত হয়, যা লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এগুলো লিভারের সিরোসিস বা অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

কী করবেন: ভাজাপোড়া এবং ফাস্ট ফুড পরিহার করুন। ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্না করা খাবার খান। এয়ার ফ্রায়ার বা কম তেলে গ্রিল, বেকড খাবার বেছে নিন।

৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং রেড মিট:

কেন ক্ষতিকর: প্রক্রিয়াজাত খাবার (আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড) যেমন- ইনস্ট্যান্ট নুডুলস, প্রক্রিয়াজাত মাংস (সসেজ, সালামি, বেকন), প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এবং মিষ্টি সিরিয়ালগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, লবণ এবং কৃত্রিম প্রিজারভেটিভস থাকে। এই উপাদানগুলো লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লিভারকে এই সমস্ত রাসায়নিক উপাদান প্রক্রিয়াজাত করতে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, যা লিভারের ক্ষতি করে।

রেড মিট (গরু ও শুয়োরের মাংস) এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস-এ উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে রেড মিট বেশি খেলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ধরনের মাংস হজম করতে লিভারের বেশি পরিশ্রম হয় এবং এতে থাকা কিছু উপাদান লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

কী করবেন: প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা ফলমূল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য গ্রহণ করুন। রেড মিটের পরিবর্তে চর্বিহীন মাংস যেমন - মুরগির মাংস (চামড়াবিহীন), মাছ এবং ডালজাতীয় প্রোটিন বেছে নিন।

লিভারকে সুস্থ রাখতে আর কী করবেন?
এই ৩টি খাবার এড়ানোর পাশাপাশি, আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা লিভারের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।

নিয়মিত ব্যায়াম: শারীরিক কার্যকলাপ ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং লিভারে চর্বি জমা কমাতে সহায়ক।

অ্যালকোহল পরিহার: অ্যালকোহল লিভারের জন্য সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি সরাসরি লিভারের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সুষম খাদ্য: প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন অ্যাভোকাডো, বাদাম, জলপাই তেল) গ্রহণ করুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের চর্বি, ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ।

আপনার খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন আনলে তা লিভারের স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আজই এই ক্ষতিকর খাবারগুলো বর্জন করুন এবং একটি সুস্থ লিভার নিয়ে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।

ফারুক

×