ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

কিডনির সমস্যা হলে যেসব লক্ষণ আগে দেখা দেয়, ৯০% মানুষই জানে না

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৭ জুলাই ২০২৫

কিডনির সমস্যা হলে যেসব লক্ষণ আগে দেখা দেয়, ৯০% মানুষই জানে না

ছবি: সংগৃহীত

কিডনি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন করে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করে। তবে কিডনি রোগের লক্ষণগুলো প্রায়শই এতটাই সাধারণ হয় যে, ৯০% মানুষই তা বুঝতে পারেন না এবং রোগ যখন মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখনই তা ধরা পড়ে। তাই, প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।

কিডনি সমস্যার নীরব লক্ষণগুলো যা অনেকেই জানেন না:
কিডনি রোগকে 'নীরব ঘাতক' বলা হয়, কারণ এর উপসর্গগুলো খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় এবং অনেক সময় অন্য সাধারণ শারীরিক সমস্যার মতো মনে হতে পারে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেওয়া হলো যা কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে:

ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এর ফলে শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভব হয়। এছাড়াও, সুস্থ কিডনি এরিথ্রোপোয়েটিন (EPO) নামক একটি হরমোন তৈরি করে, যা লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই হরমোন উৎপাদন কমে যায়, ফলে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে, যার অন্যতম লক্ষণ হলো তীব্র ক্লান্তি। অনেকে এটিকে শুধুমাত্র বয়স বা স্বাভাবিক ব্যস্ততার কারণে সৃষ্ট ক্লান্তি বলে ভুল করেন।

প্রস্রাবের পরিবর্তন: প্রস্রাবের পরিমাণে, ফ্রিকোয়েন্সিতে বা চেহারায় পরিবর্তন আসা কিডনি সমস্যার একটি বড় লক্ষণ।

ঘন ঘন প্রস্রাব: বিশেষ করে রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া (Nocturia) কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

কম প্রস্রাব: কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে প্রস্রাবের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।

ফেনাযুক্ত প্রস্রাব: প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা বা বুদবুদ দেখা গেলে তা প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতির লক্ষণ হতে পারে।

প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন: প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ বা লালচে হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় প্রস্রাবে রক্তও দেখা যেতে পারে।

শরীর ফুলে যাওয়া (এডিমা): কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং পানি বের করতে সাহায্য করে। যখন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শরীর থেকে এই অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের হতে পারে না, ফলে তা শরীরে জমে যায়। এর ফলে মুখ, চোখ, পা, গোড়ালি বা হাতে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের নিচে ফোলাভাব দেখা দিলে তা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব বা বমি: রক্তে বর্জ্য পদার্থ জমে যাওয়ার কারণে ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং এমনকি বমিও হতে পারে। এটিও একটি সাধারণ লক্ষণ যা অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

ত্বকে চুলকানি এবং শুষ্কতা: কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থ অপসারণ না করলে তা রক্তে জমা হতে থাকে, যা ত্বকে শুষ্কতা, চুলকানি এবং র্যাশ সৃষ্টি করতে পারে। ত্বকের রঙ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়াও একটি লক্ষণ।

পেশী টান (মাসল ক্র্যাম্প) বা দুর্বলতা: শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটলে (যেমন ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রায় পরিবর্তন) পেশী টান বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

শ্বাসকষ্ট: কিডনির সমস্যা হলে ফুসফুসে তরল জমা হতে পারে, যা শ্বাসকষ্টের কারণ। এছাড়াও রক্তাল্পতার কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ: কিডনি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যা কিডনির আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগের প্রথম লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়।

পিঠের নিচের দিকে ব্যথা: কিডনি শরীরের পিছনের দিকে অবস্থিত। তাই কিডনির সমস্যা হলে পিঠের নিচের দিকে বা কোমরের পাশে ব্যথা হতে পারে।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদি উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা যায়, তবে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয় করা গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা এবং জটিলতা এড়ানো সম্ভব। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো জরুরি।

সুস্থ জীবনযাপন, সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান এবং নিয়মিত ব্যায়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু কোনো লক্ষণ দেখলে তা অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ফারুক

×