ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ওভারথিংকিং: অতিরিক্ত চিন্তার ভয়াবহ জাল থেকে মুক্তির উপায়

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ২৭ জুলাই ২০২৫

ওভারথিংকিং: অতিরিক্ত চিন্তার ভয়াবহ জাল থেকে মুক্তির উপায়

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের অন্যতম একটি সাধারণ উপসর্গ হলো ওভারথিংকিং বা অতিরিক্ত চিন্তা করা। এটি একটি রোগ নয়, বরং একটি লক্ষণ, যা মানুষের মনোজগতে ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলে এবং জীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক মানুষ জানেনই না যে, তারা প্রতিনিয়ত ওভারথিংক করছেন। কেউ কেউ সারাজীবন অতিরিক্ত চিন্তার মধ্যেই কাটিয়ে দেন, কিন্তু বুঝতেই পারেন না যে সমস্যার শিকড়টা কোথায়।

ওভারথিংকিং আসলে কী?
ওভারথিংকিং মানে হলো এমন কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে চিন্তা করা, যেটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই বা খুব স্বাভাবিকভাবেই ছেড়ে দেওয়া যেত। এটি হতে পারে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা, অতীতের অনুশোচনা, বা এমন কিছু ভাবনা যা পুরোপুরি অহেতুক ও অযাচিত। যেমন: "আমি কাল ঠিকমতো ভাইভা দিতে পারবো তো?", "কেন আমি ঐ কথা বললাম?", "যদি ভুল করি?", "যদি তারা আমাকে খারাপ ভাবে?"—এই ‘যদি’ ভিত্তিক ভাবনাগুলোই ওভারথিংকিংয়ের মূল খাদ্য।

এই প্রবণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওভারথিংকিং কমাতে হলে প্রথমে চিন্তার কারণ চিহ্নিত করতে হবে। অর্থাৎ, আপনি কিসের জন্য উদ্বিগ্ন হচ্ছেন সেটা লিখে ফেলুন। লিখে রাখলে আপনার মস্তিষ্ক কিছুটা মুক্তি পায় এবং চিন্তাটি স্পষ্ট হয়।

এরপর নিজের চিন্তাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করুন—একটি হচ্ছে আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে, আরেকটি আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। যেটা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটার ওপর সময় নষ্ট না করে যেটা আপনার হাতে আছে, সেটি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকেন, তাহলে জ্যাম নিয়ে বারবার ‘উফ’ ‘আহ’ না করে বরং চিন্তা করুন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, দেরি হলে কাকে জানানো দরকার ইত্যাদি। এভাবেই চিন্তাকে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিতে দেখতে শিখতে হবে।

"যদি" ভিত্তিক চিন্তা থেকে বের হয়ে আসার কৌশল
ওভারথিংকারদের সাধারণত সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো "What if"—যদি এটা হয়, যদি না পারি, যদি অপমানিত হই ইত্যাদি। এইসব চিন্তা কেবল মানসিক চাপ বাড়ায়। তাই ভাবতে হবে: এই চিন্তাটা কি বাস্তব জীবনে সত্যিই কোনো প্রভাব ফেলছে? আমি যদি এটা না ভাবি, তাহলে কি খুব খারাপ কিছু ঘটবে?

লেখার মাধ্যমে আপনি নিজের চিন্তার বিশ্লেষণ করতে পারবেন—কি হবে যদি করেন, আর কি হবে যদি না করেন। এতে আপনি হয়তো বুঝবেন, আপনার অনেক চিন্তাই অমূলক।

চিন্তার সময় নির্ধারণ করুন
একটি কার্যকর কৌশল হলো—চিন্তার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে রাখা। নিজেকে বলুন, "আমি এই চিন্তা করব আজ সন্ধ্যা ৭টার পর", আর তখন পর্যন্ত অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। দেখা যাবে, সেই সময় এসে গেলে আপনি আর চিন্তাটাই মনে করতে পারছেন না, কিংবা তার তীব্রতা অনেক কমে গেছে।

মনোযোগ সরানোর কৌশল
চিন্তা থামাতে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে হবে। বই পড়া, গান শোনা, শরীরচর্চা, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো, নতুন কিছু শেখা, ধর্মচর্চা, মেডিটেশন, ডিপ ব্রিদিং—এই সবকিছুই আপনার মনকে প্রশান্ত করতে সাহায্য করবে।

বিশেষ করে লেখা—একটি অত্যন্ত কার্যকর উপায়। চিন্তাগুলো খাতায় লিখে ফেলুন। এতে মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমবে এবং আপনার চিন্তাগুলো পর্যালোচনা করতে সুবিধা হবে।

শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন
ওভারথিংকিং বাড়ে অলসতা ও নির্জনতা থেকে। দৌড়ানো, হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, সাঁতার কাটা—এই ধরনের শারীরিক কার্যক্রম মানসিক ভার কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

নিজের প্রতি দয়ালু হোন
সবশেষে, নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন। নিজের ভুলগুলোকে ক্ষমা করতে শিখুন। বলুন, "আমি তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী সেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম"—এমন ইতিবাচক চিন্তাই আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিন
সবকিছু করেও যদি আপনি প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত অনুভব করেন, তাহলে সাইকিয়াট্রিস্ট বা সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিতে কখনো দ্বিধা করবেন না। মানসিক সমস্যা কোনো দুর্বলতা নয়—এটি চিকিৎসাযোগ্য একটি বিষয়।

 

শেখ ফরিদ
 

×