
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় প্রতিটি ঘরে, রাস্তায়, আকাশে, এমনকি জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান পানিতেও লুকিয়ে আছে মৃত্যু। এখন গাজায় পানির খোঁজে বের হওয়া, পানি সরবরাহ করা, অথবা সামান্য এক গ্লাস পানি খাওয়া সবই জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
গাজাবাসীর প্রতিদিনের সংগ্রাম এখন একদিকে বেঁচে থাকার লড়াই, অন্যদিকে পানির জন্য জীবন দেওয়া। ১৩ জুলাই, গাজার নুসাইরাত ক্যাম্পের ‘নিউ ক্যাম্প’ এলাকায়, পানি সংগ্রহের লাইনে থাকা ১১ জন ফিলিস্তিনিকে (যার মধ্যে ৭ জন শিশু) ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হত্যা করা হয়। এই রক্তাক্ত দৃশ্য আজ গোটা ফিলিস্তিনের পানি সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি।
ইসরায়েলি সেনারা ধারাবাহিকভাবে গাজার পানির অবকাঠামো ধ্বংস করছে। ৮৫ শতাংশের বেশি পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা আজ সম্পূর্ণ অচল। পাইপলাইন, কূপ, পানি পরিশোধন কেন্দ্র সবই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসপ্রাপ্ত। এমনকি পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের গুদামঘরেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছে, ধ্বংস করেছে মেরামতের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ।
২১ জুলাই, গাজার রিমাল এলাকায় একটি কাজ করা ডেসালিনেশন প্ল্যান্টে হামলা চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। এটি ছিল শহরের হাতে গোনা কিছু কার্যকর পানির উৎসের একটি।
একদিকে পরিকাঠামো ধ্বংস, অন্যদিকে ইচ্ছাকৃতভাবে পানি সংক্রান্ত মেটেরিয়াল গাজার মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ, এই দুইয়ের ফলে সাধারণ মানুষ বাধ্য হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতে। গরমে হাঁপিয়ে উঠা এই মানুষগুলো কখনো কখনো পানির জন্যই প্রাণ হারাচ্ছে। পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
আহমাদ আবুশাওয়িশ নামক এক সাংবাদিক জানান, পানি খেয়ে তিনিও আক্রান্ত হন হেপাটাইটিস-এ। স্থানীয় কূপ থেকে পানি খাওয়ার ফলে শরীরের চামড়া হলুদ হয়ে যায়, তীব্র পেটব্যথা ও দুর্বলতায় তিনি দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া কিছুই জোটেনি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিতে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার অনেকেই শিশু। পানির অভাবে ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ, যা প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ।
ইসরায়েল গাজার উপকূলীয় অঞ্চলকে সামরিক নিষিদ্ধ এলাকা ঘোষণা করেছে। ফলে মাছ ধরা, সাঁতার কাটা বা সমুদ্রের ধারে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যারা সাহস করে পানির ধারে যান, তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি জেলে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। আর একই সময়ে ইসরায়েলি নাগরিকেরা একই ভূমধ্যসাগরে মুক্তভাবে সাঁতার কাটেন, সূর্যস্নান করেন, এবং মাথাপিছু দিনে ২৪৭ লিটার পানি ব্যবহার করেন। সেখানে গাজায় প্রতিজন পানি পাচ্ছেন মাত্র ২-৯ লিটার।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গাজার ওপর ‘জেনোসাইড’ হচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়, যেখানে পানি বঞ্চনাকেই তারা ইসরায়েলের একটি ‘ইচ্ছাকৃত হত্যাযন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে। এখন, এক বছর পর, হাজার হাজার মানুষ এই পানি-অস্ত্রায়ণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে,অনেকের মৃত্যুর হিসাব রেকর্ডেই আসছে না।
সূত্র: https://www.aljazeera.com/opinions/2025/7/26/in-gaza-water-kills-too
মুমু ২