
ছবি : সংগৃহীত
কখনো ঘন অন্ধকার রাতে গ্রামের কোনো খোলা মাঠে বা নদীর ধারে চোখে পড়তো ছোট ছোট আলোর ঝিলিক জোনাকি পোকা। শিশুরা কৌতূহলে দৌড়ে যেত তাদের ধরতে, বড়রাও মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখত প্রকৃতির এই মায়াবী খেলা। অথচ ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য এই দৃশ্য এখন যেন গল্প-উপন্যাসের কল্পনার মতো।
একসময় রাজধানীর আশপাশে, এমনকি কিছু পারিবারিক বাগানেও জোনাকির দেখা মিলতো। কিন্তু আজকের ঢাকা কংক্রিটের জঙ্গল, আলোর দানব, শব্দদূষণ আর বায়ুদূষণে জর্জরিত এক জনপদ। রাতেও নিস্তব্ধতা নেই, নেই প্রাকৃতিক পরিবেশ—ফলে হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকি, যেমন হারিয়ে গেছে কোকিলের ডাক কিংবা শালিকের ঝাঁক।
পরিবেশবিদদের মতে, জোনাকি পোকা বেঁচে থাকার জন্য দরকার হয় পরিচ্ছন্ন ও আর্দ্র পরিবেশ, পাশাপাশি গাছগাছালি ও কম আলোদূষণের পরিবেশ। ঢাকায় এর কোনোটিই এখন আর পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হলে এমন অনেক প্রজাতিই হারিয়ে যাবে, আর জোনাকি তার এক প্রতীক মাত্র।
নগরবাসীর চোখে এটি শুধুই আরেকটি ক্ষতি। উত্তরার বাসিন্দা লায়লা তাসনিম বলেন, আমার শৈশবে নানা বাড়িতে গিয়ে জোনাকি ধরার অভিজ্ঞতা ছিল। আমার সন্তানেরা জানেই না ওগুলো কী। ওদের জন্য এসব শুধু বইয়ের ছবি।
বিভিন্ন প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন বলছে, নগরায়ণ, রাসায়নিক কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, এবং আলো দূষণ কমানো না গেলে শুধু জোনাকি নয়, আরও অনেক ক্ষুদ্র প্রজাতির পতঙ্গও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফলে প্রভাব পড়বে সম্পূর্ণ খাদ্যচক্রে।
তাই এখনই সময়, নগর পরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব নীতি অন্তর্ভুক্ত করার। শিশুদের প্রকৃতির এই বিস্ময়গুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। নয়তো একদিন হয়তো বলতে হবে—“এক ছিল জোনাকি, রাতের আকাশে ছোট্ট জোনাকি আলো”।
ঢাকায় রাত জেগে জোনাকি দেখা এখন কেবলই স্মৃতির মায়ায় জড়িয়ে থাকা কল্পনা। প্রকৃতির এই নিঃশব্দ নিঃশেষে আমরা কী এতটাই উদাসীন?
Mily