ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

নিরাপদ সমাজ গঠন

নিরাপত্তা সচেতনতা ও আমাদের করণীয়

কর্নেল ছাবিকুল আমিন

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২৩:৫১, ২৬ জুলাই ২০২৫

নিরাপত্তা সচেতনতা ও আমাদের করণীয়

নিরাপত্তা শব্দটি শুনলেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা মনে আসে

নিরাপত্তা শব্দটি শুনলেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা মনে আসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজেরাই সমাজে বসবাসের জন্য বিভিন্নভাবে নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের এ ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সহায়তা করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অন্যতম উপায় হচ্ছে সচেতনতা। যে যত বেশি সচেতন সে ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে তত বেশি নিরাপদ।

নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, বিশেষ করে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন বিপদের মাত্রা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের ব্যবস্থা ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাসমূহকে অনেকের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কোনটি আসলে প্রয়োজনীয় আর কোনটি অপ্রয়োজনীয় তা বিশ্লেষণের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার নিজস্ব পর্যায়ে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে হবে।

আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের ঝুঁকি বিশ্লেষণ-মূল্যায়ন করতে পারি তাহলেই আমরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এ কারণে সঠিকভাবে ব্যক্তিগত, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঝুঁকি মূল্যায়ন সাপেক্ষে নিরাপত্তা কিভাবে নিশ্চিত করতে হবে তার ওপর আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। 
নিরাপত্তা বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সকলেই ভাবি যে, আমরা জানি। কিন্তু আসলেই কি আমরা বুঝি যে নিরাপত্তা কি? এটা কি সবার ক্ষেত্রে একই রকম? আমার জন্য নিরাপত্তা কি এবং কোনো সংজ্ঞাটি প্রযোজ্য হবে তা বোঝা এবং জানাটা খুবই জরুরি। নিরাপত্তা বলতে সাধারণ অর্থে বুঝায় বিপদ থেকে মুক্ত থাকা। কিন্তু ইংরেজিতে ‘Security’ শব্দের বাংলা হচ্ছে নিরাপত্তা। আবার ‘Security’ শব্দের বাংলাও নিরাপত্তা। এখানে মনে হয় আমাদের বোঝার একটু বিষয় আছে।

সাধারণভাবে বোঝার সুবিধার্থে আমরা এভাবে বলতে পারি যে, ইংরেজিতে ‘ঝবপঁৎরঃু’ শব্দের বাংলা যে নিরাপত্তা তার মানে হচ্ছে মানবঘটিত বা কোনো প্রাণীঘটিত এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্ট বিপদ থেকে রক্ষা। আর ‘ঝধভবঃু’ শব্দের অর্থ যে নিরাপত্তা, তার মানে হচ্ছে, কোনো যন্ত্র (মেশিন, যানবাহন ইত্যাদি) বা বস্তু থেকে নিরাপদ থাকা যেখানে মানুষ বা প্রাণীর ভূমিকা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে এবং যেটা অনিচ্ছাকৃত। বাংলায় এ ধরনের নিরাপত্তাকে অনেক ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষা’ নামে অবিহিত করা হয়। 
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরনের নিরাপত্তাকে বুঝায়। ব্যক্তির নিরাপত্তা, বস্তুর নিরাপত্তা এবং তথ্যের নিরাপত্তা। এই তিন ধরনের নিরাপত্তা সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। আমরা যদি বিভিন্ন মাত্রার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করি সেগুলো হতে পারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়। সকল ক্ষেত্রেই ইই তিন প্রকারের নিাপত্তার কথা বিবেচনা করলে সেই পর্যায়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

আমরা যদি উদাহরণস্বরূপ ব্যক্তিগত পর্যায়ের কথা আলোচনা করি তাহলে দেখা যাবে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য আমি নিজেকে এবং আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আপনজন যারা আছেন যেমন আমার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর, শাশুড়ি তাদের নিরাপত্তাহানী হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তাহানীতে ভুগতে পারি। বস্তু হিসেবে আমার নিজস্ব জিনিসপত্র, বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পযসা ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করতে পারি। আর তথ্যের নিরাপত্তা বলতে বুঝায় আমার ব্যক্তিগত তথ্য অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তি থেকে নিরাপদ রাখা।

আমরা অনেকে সময় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ভ্রমণ পরিকল্পনা শেয়ার করি। যেমন ‘আমি সপরিবারে কোথাও বেড়াতে যাব বা হজে যাব সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন’ এ ধরনের স্টেটাস দিয়ে থাকি। এই ম্যাসেজটিকে কীভাবে ব্যবহার করবে তা আমার জানা নেই। কিন্তু অমাকে যদি কোনো দুষ্কৃতকারী পর্যবেক্ষণ করে তাহলে কিন্তু আমার এই ম্যাসেজের মাধ্যমে আমি ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে চরম হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি। একই ধরনের বিষয় প্রযোজ্য হবে আমার প্রাতিষ্ঠানিক, সমাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। 
কোনো বিষয়টি কোথায় বলা উচিত বা উচিত নয় তা সঠিকভাবে বোঝা এবং সে অনুযায়ী কাজ করাকে আমরা নিরাপত্তা সচেতনতা বলতে পারি। একজন নিরাপত্তা সচেতন ব্যক্তি কখনই তার ব্যক্তিগত বিষয় বাইরের কারো কাছে অপ্রয়োজনে শেয়ার করবে না। এই সচেতনতা আমাদের মাঝে তৈরি হবে যদি আমরা আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় ঝুঁকিসমূহ নিয়ে চিন্তা করি। যেমন আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমরা বিকাশ বা এ ধরনের বিভিন্ন ব্যবস্থার সহায়তা নিয়ে থাকি।

এক্ষেত্রে দেখা যায় বিকাশ বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যেমন বিকাশের পাসওয়ার্ড বা ওটিপি শেয়ার না করা, সর্বশেষ ব্যালেন্স বা এ ধরনের তথ্য কাউকে না জানানো ইত্যাদি। এ ধরনের বিষয়গুলো একজন সচেতন ব্যক্তি কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক প্রচারণা ছাড়া নিজেই বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারা উচিত। এজন্য প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত তার নিজস্ব, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি সকল পর্যায়ের নিজস্ব ঝুঁকিসমূহ বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের আশপাশে যে সমস্ত মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তাদের দেখে শিক্ষা গ্রহণ করা। এজন্য বলঅ হয় যে, ঠেকে শিক্ষা গ্রহণের চেয়ে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। 
নিরাপত্তার বিষয়টি তাহলে কার দায়িত্ব? আমরা উপরের আলোচনা থেকে যা বুঝতে পারলাম তা হলো যার যার ব্যক্তিগত সুরক্ষা তার নিজস্ব দায়িত্ব। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিধান করার জন্য আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে অবশ্যই কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে যা নির্ভর করবে আমার নিজস্ব ঝুঁকি বিশ্লেষণের ওপর। আমি এবং আমার পরিবারের সকল সদস্য, যাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার ওপর তাদের সকলকেই আমার নির্ধারিত এই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে এবং আমার একটা নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে এই ব্যাপারটি নিশ্চিত করার।

সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কিছু স্থায়ী নির্দেশনা দেওয়া থাকবে যা সকল সদস্য মেনে চলতে হবে এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীর জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং তা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আমরা জানি যে, জাতীয় নিরাপত্তার হজন্য বিভিন্ন নিয়ম-কানুন রয়েছে কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পারব যে সমস্ত দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা আসলে যথাযথ নিয়ম কানুন মেনে চলছে বলেই উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবে কীভাবে আমরা এই নিরাপত্তা সচেতনতা উন্নত করতে পারি। যে কোনো ধরনের শিক্ষাই শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবার এরপর আসে সামাজিক শিক্ষা এবং এরপরে প্রাতিষ্ঠানিক অর্থাৎ স্কুল কলেজ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রদত্ত শিক্ষা। পারিবারিক শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি আমাদের বাবা, মা অথবা গুরুজনেরা যা করে থাকেন তা ছোটবেলা থেকে দেখে। এক্ষেত্রে আমার বাবা যদি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন তাহলে তা তিনি যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং কোনো ক্ষেত্রে কি করণীয় আমাদের নিয়মিত বোঝান, তাহলে আমি সেই শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারব।

কিন্তু কোনো পরিবারে যদি সেই পরিবারের প্রধান এই বিষয়গুলো শুধু নিজে নিজেই করেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের এই বিষয়ে কোনো শিক্ষা না দেন বা আলোচনা না করেন, তাহলে তার পরিবারে সদস্যরা নিজেদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যতটুকু বুঝতে পারবেন ততটুকুই শিক্ষা গ্রহণ করবেন। তাই পরিবারের প্রধানে উচিত তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ পরিবারের সকলের সঙ্গে আলোচনা করা, তাদের বোঝানো এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো পালন নিশ্চিত করা। 
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মূল ধাপ হলো স্কুল। স্কুলের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি যদি জীবনমুখী নিরাপত্তা ও নৈতিক শিক্ষাগুলো দেওয়া হয় তাহলে সার্বিকভাবে আমরা একটি নিরাপত্তা সচেতন গোষ্ঠী তৈরি করতে পারব। নৈতিক শিক্ষার ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায়শই আলোচনা করে থাকি। আমাদের  জীবনের কোনো একটি পর্যায়ে এই শিক্ষা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি নৈতিক শিক্ষা পরিবার থেকেই আসবে এবং বিভিন্ন শিক্ষার মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নৈতিন শিক্ষা নিশ্চিত হয়ে যাবে। কিন্তু কোন শিক্ষাই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া আদর্শ শিক্ষা হতে পারে না।

আমরা এই লিখার শুরুতেই আলোচনা করেছিলাম যে, নিরাপত্তা হচ্ছে মূলত অন্য মানুষ বা প্রাণী দ্বারা সংঘটিত বিপদ হতে রক্ষা পাওয়া সেক্ষেত্রে আমরা সকলে যদি সঠিক নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমরা সকলেই একে অপরের কাছ থেকে নিরাপদ থাকব। বর্তমানে আমরা বেশিরভাগ মানুষ শহরে সংস্কৃতিতে বড় হচ্ছি। এখানে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই এক জায়গায় বেশিদিন থাকতে পারি না। আমরা যেই সমাজে বসবাস করি সেখানে আমরা পাশাপাশি ফ্ল্যাট বা বাড়িতে থাকলেও একজন আরেকজনকে ব্যক্তিগতভাবে জানি না পূর্বে মানুষ যখন গ্রামে বা পড়া/মহল্লায় একটি পরিবারের মতো বসবাস করত তখন সামাজিক শিক্ষা অনেক বেশি জোরদার ছিল।

মুরব্বিদের সালাম দেওয়া, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের আপন ছোট ভাইবোনের মতো স্নেহ করা, একজনের বিপদে অন্যরা এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক শিক্ষা ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহরে জীবনে এই শিক্ষা একেবারেই অনুপস্থিত বলা যায়। এই শূন্যতাকে পূরণ করতে হলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। নৈতিক শিক্ষা ও নিরাপত্তা সচেতনতামূলক শিক্ষাকে পাঠক্রমের অংশে পরিণত করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত প্রশ্ন বিভিন্ন পর্যায়ের পরীক্ষায় পৃথক অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 
শুধু স্কুল কলেজে নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন আমরা জীবিকার জন্য চাকরি করি তখন সেখানে শুধু সুরক্ষার বিষয়টি প্রতি জোর দেওয়া হয়। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যেই সীমিত রাখা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহে নিরাপত্তার ওপর নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং তা নিয়মিত বিরতিতে অনুশীলন করা হয়। আমাদের সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানেই আমরা এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি। এর জন্য প্রথমে সেই প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকিসমূহ চিহ্নিত করতে হবে এবং সে সমস্ত চিহ্নিত বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে হবে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করা এবং তার ওপর প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারি। এভাবে যদি আমরা স্কুল কলেজ এবং কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে পারি তাহলে ধীরে ধীরে আমাদের দেশে একটি নিরাপত্তা সচেতনতার সংস্কৃতি পরে উঠবে। বর্তমান যুগে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। 
সকল আলোচনার পরে আমরা এই উপসংহারে উপনীত হতে পারি যে, বর্তমান যুগে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নৈতিক শিক্ষা ও নিরাপত্তা সচেতনতার শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। বর্তমান যুগের শহরে জীবন মানুষের সামাজিক বন্ধনকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। যার ফলে সামাজিকভাবে আমাদের যে নিরাপত্তার বিষয় ছিল তা শহরকেন্দ্রিক জীবনে অনেকটাই অনুপস্থিত। এ ধরনের নিরাপত্তা সচেতনতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন যে কোন পর্যায়েই করা সম্ভব, তবে অল্প বয়স থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে বলে অনুমেয়।

এই শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যদি একটি নিরাপত্তা সচেতন সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারি, তাহলেই আমরা বর্তমান যুগের হুমকিসমূহ মোকাবিলা করে আমাদের সন্তানদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ ও সমাজ উপহার দিতে পারব ইনশাআল্লাহ। সর্বশেষ ‘নেলসন মেন্ডেলার’ একটি উক্তি দিয়ে আমি শেষ করব ‘Safety and security don't just happen, they are the result of collective consensus and public investment, We owe our children, the most vulnerable citi“ens in our society, a life free of violence and fear.’ অর্থাৎ ‘নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা নিজে থেকেই নিশ্চিত হয় না এগুলো সম্মিলিত ঐকমত্য এবং জনসাধারণের অর্পণের ফসল। আমাদের শিশুরা যারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিক, তাদের জন্য সহিংসতা এবং ভীতিহীন জীবন নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা দায়বদ্ধ।’

লেখক : সেনা কর্মকর্তা 
কর্নেল ছাবিকুল আমিন, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, জি

প্যানেল হু

×