ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসলাম কি বলে ইহুদিদের নিয়ে? ইতিহাস, হাদিস ও বাস্তবতার একত্র বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৭ জুলাই ২০২৫

ইসলাম কি বলে ইহুদিদের নিয়ে? ইতিহাস, হাদিস ও বাস্তবতার একত্র বিশ্লেষণ

ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান এই তিন ধর্মই আসমানি কিতাবপ্রাপ্ত। মহান আল্লাহ ইহুদি জাতির জন্য তাওরাত, খ্রিস্টানদের জন্য ইঞ্জিল এবং মুসলমানদের জন্য কোরআন নাজিল করেছেন। কোরআনের ভাষায় এদের ‘আহলে কিতাব’ বলা হয়। যদিও বর্তমান সময়ে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা মূল ধর্মগ্রন্থ থেকে সরে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিকৃত ধর্মীয় আদর্শে বিশ্বাস করে।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি জাতির ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বনি ইসরাইল ইসলামের একটি মৌলিক ধর্মীয় ধারণা। হযরত মূসা (আ.) ইসলাম ধর্মে একজন গুরুত্বপূর্ণ নবী ও বার্তাবাহক হিসেবে সম্মানিত। কোরআনে তার নাম ও জীবনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি বার এসেছে। বনি ইসরাইল এবং ইহুদিদের নিয়ে কোরআনে প্রায় ৫০টি স্থানে আলোচনা করা হয়েছে, পাশাপাশি হাদিসেও রয়েছে অসংখ্য উল্লেখ।

ইহুদি জাতির উত্থান ও ধর্মীয় পরিবর্তন

ইহুদি জাতির সূচনা হয় হযরত ইসহাক (আ.)-এর পুত্র ইয়াকুব (আ.) থেকে, যার হিব্রু উপাধি ছিল ‘ইসরাইল’। তাঁর সন্তানদের বলা হয় বনি ইসরাইল। পরবর্তীতে তারা ‘ইহুদি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ইসলাম অনুযায়ী, হযরত ইব্রাহিম (আ.) এবং মূসা (আ.) ছিলেন মুসলমান, এবং তারা কখনোই ইহুদি বা খ্রিস্টান ছিলেন না। ইহুদিরা তাওরাত ধ্বংস হওয়ার পর হযরত উজাইর (আ.)-কে আল্লাহর সন্তান মনে করে শিরকে লিপ্ত হয়।

ইসলাম ও শেষ নবীর প্রতি ইহুদি জাতির বিদ্বেষ

তাওরাতে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের সুসংবাদ থাকলেও ইহুদিরা ঈর্ষা ও গর্বের কারণে সত্য গ্রহণ করেনি। তাদের বিশ্বাস ছিল, শেষ নবী ইহুদি বংশে আসবেন। মক্কার কুরাইশ বংশে নবীর আবির্ভাব তারা মেনে নিতে পারেনি। ফলে হিজরতের পর নবী (সা.) মদিনার তিনটি ইহুদি গোত্র বনু কাইনুকা, বনু নাজির ও বনু কুরাইজা এর সঙ্গে চুক্তি করলেও তারা একাধিকবার চুক্তি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করে।

সূরা মায়েদা ও মুসলমানদের চিরশত্রু

আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদার ৮২ নম্বর আয়াতে ইহুদি ও মুশরিকদের মুসলমানদের চরম শত্রু হিসেবে ঘোষণা দেন। আয়াতে ব্যবহৃত “আদাওয়াত” শব্দটি বোঝায় গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বিদ্বেষ। ইসলামী তাফসীর অনুযায়ী, ইহুদিদের মধ্যে সত্য গোপন, অহংকার, একগুয়েমি এবং নবীদের হত্যা করার প্রবণতা বরাবরই ছিল। এমনকি তারা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল এবং বারবার তাঁকে ক্ষতি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

খ্রিস্টানদের তুলনামূলক অবস্থান

যদিও খ্রিস্টানদের মধ্যেও বিদ্বেষপূর্ণ শ্রেণি রয়েছে, তবুও কোরআনের দৃষ্টিতে তাদের একটি অংশ নম্র, জ্ঞানী ও দরবেশ প্রকৃতির হওয়ায় মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের সম্প্রীতির সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইহুদিদের ষড়যন্ত্রে পড়ে খ্রিস্টানরাও আজ মুসলিম নিধনে ইহুদিদের সহচর হয়ে উঠেছে।

ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না মুসলমানরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে বিজয়ী হবে। এমনকি গাছ ও পাথর পর্যন্ত বলে দেবে, “হে মুসলমান! আমার পেছনে একজন ইহুদি লুকিয়ে আছে, এসো এবং তাকে হত্যা করো।”

Jahan

×