ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

পিঁপড়া সম্পর্কে যে অবাক করা তথ্য দিয়েছে আল কোরআন

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৭ জুলাই ২০২৫

পিঁপড়া সম্পর্কে যে অবাক করা তথ্য দিয়েছে আল কোরআন

আল কোরআনের বিস্ময়কর বর্ণনাগুলোর মধ্যে সূরা আন-নামলের ১৮ নম্বর আয়াতটি এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। এখানে নবী সুলাইমান (আ.) ও একদল পিঁপড়ার মধ্যে ঘটেছিল এক ব্যতিক্রমী ঘটনার বর্ণনা, যা একদিকে যেমন ঈমান জাগানিয়া, তেমনি আধুনিক বিজ্ঞানেও আজ তা নিশ্চিত প্রমাণিত সত্য।

সুলাইমান (আ.) আল্লাহর প্রিয় নবী ছিলেন, যিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী রাজা। আল্লাহ তাআলা তাকে দান করেছিলেন জিন, মানুষ, পশু ও পাখিদের ওপর শাসনক্ষমতা। তিনি বুঝতেন পশুপাখির ভাষা, আর তার সেনাবাহিনীতে ছিলেন মানুষ, জিন ও পাখির দল।

একদিন তিনি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এক এলাকায় প্রবেশ করেন। সেই অঞ্চল ছিল পিঁপড়াদের বসতি অসংখ্য মাটির ঢিবির মাঝে গড়ে ওঠা এক ক্ষুদ্রকায় সমাজ। ঠিক তখনই এক পিপীলিকা, যা ছিল দলের নেত্রী, সতর্ক করে বলে ওঠে "হে পিঁপড়ারা! নিজেদের বাসায় প্রবেশ করো, যাতে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা অজান্তে তোমাদের পিষ্ট না করে ফেলে।" (সূরা আন-নামল: ১৮)

আল্লাহর দানকৃত অলৌকিক ক্ষমতার ফলে সুলাইমান (আ.) এই ক্ষুদ্র প্রাণীর কণ্ঠস্বর শুনতে পান এবং মুচকি হেসে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রার্থনা করেন "হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে কৃতজ্ঞ বানাও তোমার সেই নিয়ামতের জন্য, যা তুমি আমার ও আমার পিতা-মাতার ওপর বর্ষণ করেছো। এবং আমাকে এমন সৎকর্ম করতে তাওফিক দাও, যা তুমি পছন্দ করো।"

কোরআনের ভাষায় নারী পিঁপড়া, বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার

এই আয়াতে ‘নামলাহ’ শব্দটি স্ত্রীবাচক। আবার ‘কালাত’ শব্দটিও আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী স্ত্রীলিঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৪০০ বছর আগেই কোরআন উল্লেখ করে দিয়েছে, সতর্ককারী পিঁপড়াটি ছিল একটি নারী। আজকের বিজ্ঞানও তাই বলে।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, পিঁপড়াদের সমাজে তিন শ্রেণির সদস্য থাকে রানী পিঁপড়া, পুরুষ পিঁপড়া ও শ্রমিক পিঁপড়া। সব শ্রমিক পিঁপড়াই নারী। তারা খাবার সংগ্রহ, বাসা তৈরি, যুদ্ধ ও সতর্কতা মূলক কাজ করে। পুরুষ পিঁপড়ারা কেবল প্রজননের জন্য জন্মায় এবং সাধারণত ডানাওয়ালা হয়। ডানা না থাকলে, তারা বাইরে যায় না, কাজেও অংশ নেয় না।

এক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা বলছে “Wingless males do not participate in taking care of the brood and active foraging outside the nest.” অর্থাৎ ডানাবিহীন পুরুষ পিঁপড়ারা কখনোই বাইরে যায় না বা খাবার সংগ্রহে অংশ নেয় না।

তাহলে কোরআনে যে পিঁপড়ার কথা বলা হয়েছে, সে যেহেতু বাহিরে ছিল এবং অন্যদের সতর্ক করছিল, সে যে নারী শ্রমিক পিঁপড়া ছিল, তা কোরআনের ভাষাগত ব্যবহার ও আধুনিক বৈজ্ঞানিক সত্য উভয়দিক থেকেই পরিষ্কার।

আরও যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে আয়াতটি:

  1. পশুপাখিরাও বিপদের পূর্বাভাস পায় — তারা একে অপরকে সতর্ক করে দেয়। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক বুদ্ধিমত্তা, যা আল্লাহ তাদের দান করেছেন।

  2. সুলাইমান (আ.) অদৃশ্যের খবর জানতেন না — পিপীলিকার আশঙ্কা ছিল, অজান্তেই তারা পিষ্ট হবে। এ থেকে বোঝা যায়, গায়েবের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।

  3. সুলাইমান (আ.)-এর বিনয় — এত জ্ঞান ও শক্তির অধিকারী হয়েও তিনি ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথা শুনে ক্ষুব্ধ হননি, বরং মুচকি হেসে তা গ্রহণ করেছেন।

  4. সত্যিকারের নেতৃত্ব — সমালোচনা শুনেও শান্ত থাকা এবং সাধারণের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া একজন আদর্শ নেতার বৈশিষ্ট্য।

সূরা আন-নামল: নামেই নয়, বার্তাও গভীর

‘নামল’ অর্থ পিপিলিকা বা পিঁপড়া। সূরাটির এই নামকরণ এক ক্ষুদ্র প্রাণীর কথা ও সে কথা থেকে উদ্ভূত জ্ঞান ও বার্তা উপলব্ধির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। সূরাটির মাধ্যমে যেমন মানুষের সীমাহীন জ্ঞান, দায়িত্বশীলতা ও কৃতজ্ঞতা শেখানো হয়েছে, তেমনি বলা হয়েছে সত্য, বিজ্ঞানের ছায়ায়ও ইসলামি ঐতিহ্য কতটা জাগ্রত ও প্রাসঙ্গিক।

Jahan

×