
ছবি: সংগৃহীত
সৌরজগতের একেবারে প্রান্তে, প্লুটোর চেয়েও বহুদূরে আবিষ্কৃত হয়েছে এক অদ্ভুত বস্তু—যার নাম ‘অ্যামোনাইট’। জাপানি জ্যোতির্বিদেরা সুবারু টেলিস্কোপ ব্যবহার করে আবিষ্কার করেছেন এটি। এ আবিষ্কার সৌরজগত নিয়ে বিদ্যমান ধারণায় বড় রকমের পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বস্তুটির নাম ‘২০২৩ কেকিউ১৪’ হলেও বিজ্ঞানীরা একে ডেকেছেন অ্যামোনাইট নামে। নামটি নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া এক সামুদ্রিক প্রাণীর ফসিল থেকে। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে সম্প্রতি এ নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
রহস্যময় ‘সেডনয়েড’
অ্যামোনাইট আসলে কোনো গ্রহ নয়, এটি একটি ‘সেডনয়েড’। এ ধরনের বস্তু অত্যন্ত বিরল—এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি সেডনয়েড শনাক্ত হয়েছে। এরা সূর্যকে ঘিরে ঘোরে, তবে নেপচুনের কক্ষপথের বাইরের অঞ্চল থেকে। অ্যামোনাইট সূর্যের সবচেয়ে কাছে এলে এর দূরত্ব হয় ৬৬ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (এইউ), আর দূরে গেলে সেটি পৌঁছে যায় ২৫২ এইউ পর্যন্ত। তুলনায়, প্লুটোর সর্বোচ্চ দূরত্ব মাত্র ৩৯ এইউ।
নবম গ্রহ তত্ত্বে ধাক্কা
বিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সৌরজগতে একটি নবম গ্রহ থাকার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। কুইপার বেল্টের ছয়টি বস্তু—সেডনা, ২০১২ ভিপি১১৩, ২০০৪ ভিএন১১২, ২০১০ জিবি১৭৪, ২০১৩ আরএফ৯৮ ও ২০০৭ টিজি৪২২—একই ধরনের কক্ষপথে ঘোরে বলে ধারণা করা হচ্ছিল যে, এদের প্রভাবিত করছে এক অদৃশ্য বৃহৎ গ্রহ।
তবে অ্যামোনাইটের কক্ষপথ পুরোপুরি আলাদা। জাপানের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির বিজ্ঞানী ইউকুন হুয়াং জানিয়েছেন, এটি অন্য সেডনয়েডদের মতো নয়। বরং এটি ভিন্ন কক্ষপথে ঘোরে, যা নবম গ্রহ তত্ত্বকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
আবিষ্কারের গল্প
এই বস্তুটি পাওয়া গেছে ‘ফসিল’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায়—যার পুরো নাম: Formation of the Outer Solar System: An Icy Legacy। এ কারণেই এর ডাকনাম অ্যামোনাইট রাখা হয়েছে। প্রথমবার ২০২৩ সালের মার্চ, মে ও আগস্টে সুবারু টেলিস্কোপে এটি দেখা যায়। ২০২৪ সালে কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় এর অস্তিত্ব। চমকপ্রদ বিষয় হলো, ১৯ বছরের পুরোনো ছবি ঘেঁটে এর অতীত চলাচলের চিহ্নও খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা।
অ্যামোনাইট আবিষ্কারের ফলে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে সৌরজগতের সীমানা নিয়ে। নবম গ্রহের অস্তিত্ব থাকুক বা না-ই থাকুক, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের বস্তু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—সৌরজগত সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা এখনও অসম্পূর্ণ।
সূত্র: ফোর্বস।
রাকিব