ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ঢেঁকির আওয়াজ নেই, হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য

মুরাদ খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ২৭ জুলাই ২০২৫

ঢেঁকির আওয়াজ নেই, হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য

ঢেঁকির আওয়াজ নেই, হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য

গ্রামের ভোরবেলা মানেই ছিল ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ। এক সময় প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকি ছিল আবশ্যিক উপকরণ। ধান ভানা থেকে শুরু করে চালের ঘুঁড়ি, চিড়া তৈরিসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হতো এই কাঠের যন্ত্র। তবে সময় বদলেছে, বদলেছে জীবনযাত্রা। আধুনিক যন্ত্রপাতির দাপটে এখন ঢেঁকি শুধুই স্মৃতি।

মানিকগঞ্জের সিংগাইর, ঘিওর, হরিরামপুর, শিবালয়সহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন আর শোনা যায় না ঢেঁকির সেই পরিচিত শব্দ। অগ্রহায়ণ মাস এলেই আমন ধান কাটা, নবান্ন উৎসব আর পিঠাপুলির আয়োজনের ব্যস্ততায় এক সময় ঢেঁকির ব্যস্ততাও বাড়ত। বধূরা দল বেঁধে ধান ভানত, গান গাইত, কিচ্ছা করত—চারপাশে সৃষ্টি হতো উৎসবমুখর পরিবেশ।

সিংগাইর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের ৭০ বছর বয়সী বিধবা জোসনা বেগম বলেন, “ঢেঁকিতে ভাঙা চালের গুঁড়ার পিঠা-পায়েসের স্বাদই আলাদা ছিল। এখনকার মতো যন্ত্রে ভাঙা চালের সঙ্গে সেটা মেলানোই যায় না।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় গরিব কৃষক পরিবারের মহিলাদের জন্য ঢেঁকি ছিল উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার। আশপাশের বাড়ি থেকে চাল বা ধান এনে ঢেঁকিতে ভেঙে আয়ের পথ তৈরি করতেন তারা।

কিন্তু বর্তমান সময়ে গ্রামে বৈদ্যুতিক রাইস মিল, চিড়া মিল ও আটার মেশিন সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ দ্রুত এবং কম খরচে ধান-চাল ভাঙানোর কাজ সারছেন। ফলে দিনে দিনে ঢেঁকির ব্যবহার একেবারে বিলীন হয়ে গেছে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, “ঢেঁকি কৃষিভিত্তিক সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। তবে সময়ের চাহিদা মেটাতে মানুষ এখন প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছে। এতে ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সময় সাশ্রয় হচ্ছে অনেক।”

বছরের পর বছর যে ঢেঁকির শব্দে মুখর ছিল গ্রামের সকালবেলা, এখন সেখানে নীরবতা। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের এক সময়ের অপরিহার্য যন্ত্র—ঢেঁকি।

তাসমিম

×