
ছবি: জনকণ্ঠ
বাংলার বর্ষা শুধু রোমান্টিক কবিতার পঙক্তিতেই নয়, বাস্তবেও এটি হয়ে ওঠে প্রাণের ঋতু। খাল-বিল, জলাভূমি আর ধানখেতে জীবনের নতুন চিত্র আঁকে এই সময়টা। কিন্তু অনেকেই হয়তো খেয়াল করেন না, এই আষাঢ়ে প্রকৃতির একটা নিঃশব্দ আহ্বান আছে – শামুকের ডিম রক্ষার আহ্বান।
বর্ষার পানিতে প্লাবিত মাঠে এখন যত্রতত্র দেখা যাচ্ছে ছোট ছোট সাদা কিংবা গোলাপি রঙের ডিমের থোকা। এগুলো আমাদের গ্রামীণ জীবনে পরিচিত সেই শামুকের, যাদের আমরা হালকাভাবে নিছক “জলজ প্রাণী” ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বলছে, এই শামুক মাটির উর্বরতা, জৈব সার উৎপাদন ও খাদ্যচক্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে পুকুর, বিল এবং ধানক্ষেতের ইকোসিস্টেমে এরা কার্যকর জীবাংশু বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করে।
বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রজনন
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, মাঠের শ্রমিক কিংবা সাধারণ পথচারী অনেকেই অজ্ঞতা বা কৌতূহলে শামুকের ডিম পিষে ফেলছেন বা ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আবার লাগাতার বৃষ্টিতে অনেক ডিম পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। অথচ এই ডিমগুলো থেকে যদি স্বাভাবিকভাবে শামুক জন্ম নিতে না পারে, তাহলে স্থানীয় প্রাকৃতিক ভারসাম্যই বিঘ্নিত হবে। এতে কৃষিতে প্রাকৃতিক সার সরবরাহ কমে যেতে পারে, একইসঙ্গে পরিবেশে পচনশীল জৈবপদার্থের বিশ্লেষণেও দেখা দিতে পারে ব্যাঘাত।
কী করণীয়?
পরিবেশবিদরা বলছেন, সাধারণ মানুষকে এখনই এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হতে হবে। মাঠে বা বিলে শামুকের ডিম দেখলে সেগুলো নষ্ট না করে বরং নিরাপদ উঁচু স্থানে সরিয়ে দেওয়া উচিত। এতে ডিমগুলো পানিতে ডুবে না গিয়ে নিরাপদে ফুটে উঠতে পারবে।
এটুকু ছোট একটি সচেতনতা প্রকৃতির জন্য হতে পারে বড় অবদান।
আহ্বান:
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে "শামুকের ডিম রক্ষা করুন, প্রকৃতিকে বাঁচান" এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়া এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া সহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এ বিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে মাঠে-মাঠে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সামাজিক মাধ্যমে।
লেখকঃ মোঃ সালমান হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কয়রা
সাব্বির