
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
এক সময় বিকেল হলেই পাড়ার লাইব্রেরি বা স্কুল-কলেজের গ্রন্থাগারে ভিড় জমাতেন বইপ্রেমীরা। পাঠকের চোখে মুখে থাকত নতুন বইয়ের গন্ধে মগ্ন হবার আনন্দ। কিন্তু এখন এই দৃশ্য আর সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রযুক্তির আধিপত্যে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়ার ঐতিহ্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন, ট্যাব এবং ই-পিডিএফের সহজলভ্যতার কারণে তরুণ সমাজ লাইব্রেরির পরিবর্তে অনলাইনেই বই পড়া বেছে নিচ্ছে। কেউ কেউ শুধুই সারাংশ পড়ে পরীক্ষায় পাস করছে, কেউ বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই কাটিয়ে দিচ্ছে অবসর সময়।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরী গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল পাঠাগারে মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন পাঠক। লাইব্রেরির দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, "আগে যেখানে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ আসতো, এখন ১০-১৫ জন এলেই অনেক মনে হয়।"
তরুণদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, "ই-পিডিএফ বা মোবাইলে বই পড়া একরকম হলেও, গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ার মধ্যে যে পরিবেশগত মনোসংযোগ, তা আর অন্য কোথাও মেলে না।"
পাঠকদের অভ্যাস বদলের জন্য তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক লাইব্রেরি আওয়ার চালুর পরামর্শ দেন।
তবে কিছু পাঠক এখনো গ্রন্থাগারে নিয়মিত যান। তন্ময় নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, "মোবাইলে চোখের ওপর চাপ পড়ে, আবার মনোযোগও নষ্ট হয়। লাইব্রেরিতে বসে বই পড়ার আলাদা অনুভব আছে।"
গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সচেতনতা, প্রচার এবং পাঠাভ্যাস গড়ার উদ্যোগ। নতুবা বইয়ের রাজ্য লাইব্রেরিগুলো একসময় স্মৃতির পাতায় স্থান করে নেবে, বাস্তব থেকে হারিয়ে যাবে।
মিরাজ খান