
ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবছর বাংলাদেশে অনেক শিশুই সাঁতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারা যায়। শহর অঞ্চলে এটি আরো ভয়াবহ। আর বর্তমান আমাদের সকল পুকুর নদী, খাল ভরাট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘর-বাড়ি, ভবন ইত্যাদি। হারাচ্ছে সাঁতার শেখার যায়গা। শহরে তো আরো বেশি সমস্যা। তাই এই সময়ে সাঁতার শেখার একটা সুযোগ বলা যেতে পারে। তাই আপনার সন্তানকে সাঁতার শেখান।
এখন বর্ষাকাল। দেশের নদ-নদী, নালা, খাল-বিল পানিতে ভাসছে। ভারী বৃষ্টির কারণেও শহর বা গ্রামের ডোবাগুলো পানিতে পূর্ণ। এটা সাঁতার না জানা মানুষের জন্য একটু আতঙ্কের বিষয় বৈকি। আর সাঁতার না জানা শিশুদের জন্য এমন সময় বেশি ভয়ের। পাশাপাশি অভিভাকদের জন্যও উদ্বেগের।
এ সময়ে শিশুরা চঞ্চল হয়ে ওঠে। আপনার অজান্তেই চলে যেতে পারে পানির নিকট। আর ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
সাঁতার এমন একটি কৌশল বা অভ্যাস, যা একবার শিখলে জীবনে কেউ আর ভুলে না। সাঁতার শিশুকে শুধু পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচায় না, শিশুর শরীরের পেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীরের মাংসপেশির শক্তি বাড়ানো, পেশির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
আধুনিক শহুরে জীবনে সাঁতার জানা মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। কিন্তু সাঁতারের আছে নানা স্বাস্থ্যসুফল। কেউ যদি সপ্তাহে মাত্র আড়াই ঘণ্টা সাঁতার কাটেন, তার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। জেনে নিন নিয়মিত সাঁতার কাটলে কী কী উপকার হয়।
শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানোসহ নানা রকমের ব্যায়াম করতে হয়। যদি এগুলোর বদলে সাঁতার কাটেন তাহলে কিন্তু শরীরের সামগ্রিক ব্যায়াম সম্পন্ন হয়।
সাঁতারে শরীরের একাধিক পেশি একসঙ্গে কাজ করে। এটি পেশির দক্ষতা ও শক্তি বাড়ায়, সন্ধি ও লিগামেন্টের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে। স্রোতের সঙ্গেই হোক বা বিপরীতে, পেশির অনেকটা শক্তি যায় সাঁতারে। তার ফলে নানা ধরনের ব্যথা, যন্ত্রণায় আরাম দিতে পারে সাঁতার।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি হওয়ার কারণে এই ব্যায়ামে শরীরের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। আর্থ্রাইটিস ও স্পনডালাইটিসের রোগীদের জন্য সাঁতার খুব কার্যকর। বিশেষ করে অ্যাংকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস নামের মেরুদণ্ডের সমস্যা উত্তরণে সাঁতার রীতিমতো উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত।
ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রেরও উপকার করে সাঁতার। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সাঁতার ভবিষ্যৎ হৃদরোগের ঝুঁকি ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। সাঁতার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করে। যাদের ব্যায়ামজনিত শ্বাসকষ্ট হয়, তারাও নির্ভয়ে সাঁতার কাটতে পারেন।
শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলে রক্ত চলাচল বাড়ায় সাঁতার। তার ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে। সঙ্গে বাড়ে কর্মক্ষমতা। সাঁতারে ওজন কমে। স্নায়ু উজ্জীবিত হয়। মানসিক চাপ-বিষণ্নতা কমে।
অভিভাবকদের নিজ উদ্যোগে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করা উচিত। একবার পানির ভয় কেটে গেলে যে কোনো জায়গায় সাঁতারের জন্য সে প্রস্তুত থাকবে। একেবারে ছোট বাচ্চাদের চৌবাচ্চা বা ফোলানো পুলে নামিয়ে পেটের নিচে হাত দিয়ে বা কিকপ্যাডের মাধ্যমে পানিতে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।
পানির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। পানিতে শরীর শিথিল রাখতে হবে। লম্বা দম নিয়ে পানির মধ্যে নাক মুখ ডুবিয়ে দম ছাড়তে হবে। পানিতে নামার আগে ওয়ার্মআপ করে নিতে হবে। ভারী খাবার খেয়ে সাঁতারে নামা যাবে না।
চার থেকে পাঁচ বছর হলেই শিশুদের সাঁতার শেখানো শুরু করা যায়। তার আগে বাড়িতে ছোট সুইমিংপুল বা গামলায় বসিয়ে কিংবা কোলে নিয়ে পানির সঙ্গে শিশুকে খেলার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। বয়সে একটু বড় শিশুদের সাঁতারের গুরুত্ব বোঝাতে হবে। পুকুর-নদী-খাল-বিল যেখানেই পড়ুুক, এই বিদ্যা জানা থাকলে, বিপদ থেকে রক্ষা পাবে শিশু।
আবির