ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

পাটের আশ ছাড়ানোয় গ্রামজুড়ে উৎসব, বাজারদরের অপেক্ষায় কৃষকের চোখ

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:১০, ২৭ জুলাই ২০২৫

পাটের আশ ছাড়ানোয় গ্রামজুড়ে উৎসব, বাজারদরের অপেক্ষায় কৃষকের চোখ

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কৃষকেরা এখন প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পাটের আশ ছাড়ানোর কাজে। পাট কেটে জাগ দেওয়ার পর খাল-বিলের পানি থেকে এখন তা তুলে এনে শুরু হয়েছে আশ ছাড়ানো গ্রামীণ কৃষির এই চেনা দৃশ্য যেন ফিরে এসেছে নতুন উৎসাহ ও সম্ভাবনা নিয়ে।

চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ২৬৯ হেক্টর বেশি। উপজেলার বাসাইল, মালখানগর, ইছাপুরা, কোলা এবং মধ্যপাড়া বালুচর ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি এলাকায় কৃষকেরা এখন পাট শুকাতে ব্যস্ত। খাল-বিলের কিনারে সারি সারি পাটের আঁশ মেলে রাখা, পাশে ছোট ছোট দলে বসে পরিবারের সবাই মিলে পাট ছাড়ানোর দৃশ্য যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

কেয়াইন ইউনিয়নের কৃষক শাহজাহান মিয়া জানান, “আমি ৩৫ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করেছি। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। এখন খালে পানি এসেছে, তাই জাগ দেওয়া এবং আশ ছাড়ানোর কাজ ঠিকঠাক চলছে।” আরেক কৃষক মিয়ার হোসেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। আমি ১৭০ শতাংশ জমিতে পাট করেছি। এখন প্রতিদিন সকাল থেকেই পাট তুলে এনে আশ ছাড়ানোয় লেগে পড়ছি। কিন্তু চিন্তা একটাই বাজারে ভালো দাম পাব কি না।”

পাটচাষের এই মৌসুমে প্রকৃতি কৃষকদের সহায় ছিল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ শুভ্র বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোগবালাই ও পোকামাকড়ের তেমন প্রভাব পড়েনি। পাটের ফলন হয়েছে আশানুরূপ। এখন কৃষকেরা আশ ছাড়াচ্ছেন। এই মুহূর্তে তারা শুধু ভালো দামের আশায় রয়েছেন।” এদিকে পাট উঠে গেলে এই জমিতেই কৃষকেরা আমন ধান রোপণের প্রস্তুতি নেবেন। তাই একদিকে পাট কেটে জাগ দিতে ব্যস্ত কৃষক অন্য দিকে দ্রুত আশ ছাড়িয়ে শুকিয়ে ঘরে তোলার তাগিদে সক্রিয় এখন উপজেলার হাজারো কৃষক পরিবার।

তবে উৎসাহ-উদ্দীপনার মাঝেও একটা উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে, বাজারদর নিয়ে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, উৎপাদন খরচের তুলনায় যদি বাজারে মূল্য না মেলে, তাহলে লাভের আশা ম্লান হয়ে যাবে। এই বাস্তবতায়, সিরাজদিখানের পাটচাষিরা এখন পাট আশ ছাড়ানোর ব্যস্ততম সময় পার করছেন চোখে শুধুই একটি প্রত্যাশা, “ভালো দাম”। যদি তা মেলে, তাহলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে পাট চাষ হবে, এমনটাই বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

আঁখি

×