
ব্যবসায়িক গতি বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক খাতের দীর্ঘদিনের তারল্য ঘাটতির পাশাপাশি ঋণ বিতরণের গতিও অনেকটা কমে গেছে। ব্যবসা ও বিনিয়োগে সুদহারজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ওপর পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
এমন প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার কমিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে গতি ফেরাতে চায়। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নীতি সুদহার কমায় মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে গতি আনতে আনা এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে পর্যবেক্ষণেও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ তাদের।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিকে কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হয়। যদিও টানা তিন বছর সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির প্রভাব পড়েছে উৎপাদন খাতে। এবার এ অবস্থান থেকে সরে নীতি সুদহার কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, তারল্য ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটারি পলিসি বিভাগ রেপো রেট দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে তা ৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘তারল্য সংকট যদি না থাকে তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তারল্য ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যাংক দ্বারস্থ না হয়। এই কারণে আমরা নীতি সুদহার কমিয়ে দিয়েছি।’ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ।
নীতি সুদহার কমায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তুলনামূলক কম সুদে অর্থ ধার নিতে পারবে। ফলে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছেও ব্যাংকগুলো কম সুদে ঋণ দিতে পারবে। এতে ঋণ নেওয়ার আগ্রহ যেভাবে বাড়বে, তেমনি অর্থের প্রবাহ বাড়বে বাজারে। বাজারে অর্থের সরবরাহ ও ভোগপ্রবণতা বাড়লে, পণ্যের দামও বাড়তে পারে। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টির দিকটিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলছেন গবেষক অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘নীতি সুদহার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র তাতে সন্দেহ নেই। এর মাধ্যমে যে আমাদের সার্বিক অর্থনীতির পরিবর্তন হয় তা কিন্তু না। সার্বিকভাবে ব্যবসার অন্যান্য আরও খরচ রয়েছে। সেই ব্যবসার খরচ কমানো একটা সঠিক পদক্ষেপ হতে পারে।’বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন কেউ কেউ। অর্থনীতিবিদদের মত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ সুদের কারণে ঋণ গ্রহণে আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে উৎপাদন খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমিয়ে অর্থনীতিতে গতি আনার চেষ্টা করছে। সেই ধারাবাহিকতায় এই পদক্ষেপ যুগোপযোগী।
গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে এখনো তারল্য সংকট রয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কতগুলো ব্যাংকে সাপোর্ট দিয়েছে। রেট যখন কমে আসবে তখন তারা এই অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পারবে।’
রেপো রেট কমানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক করিডর-ভিত্তিক অন্যান্য সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। নীতি সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা আগের মতোই ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে বহাল রাখা হয়েছে। আভার নাইট রেপো রেটও বহাল থাকছে ১০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত দেশের ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা নিবিড়ভাবে বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্যানেল হু