
সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট
তিন দিন ধরে নৌ-চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিম্নচাপ ও অম্যাবসার প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় দ্বীপের বিভিন্ন অংশের গাছপালা ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন দ্বীপের সাড়ে ১১ হাজার বাসিন্দা। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম।
দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, অমাবস্যার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতায় প্রবাহিত হয়ে দ্বীপের বিভিন্ন অংশের গাছপালা ভেঙে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে। এতে করে শতাধিক বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দ্বীপের চারদিকে জিওব্যাগ বা ব্লক ফেলানো না হলে মানচিত্র থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ হারিয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যনন্ত টানা তিনদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রলার চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দ্বীপে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয়েছে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি। নিরাপত্তার স্বার্থে মাছ ধরার ট্রলারগুলো জেটির আশপাশে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
সেন্টমার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের মানুষ খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংকটে ভুগে আসছিল। এখন নৌযান বন্ধ থাকায় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ফুরিয়ে এসেছে। আরও কয়েকদিন এভাবে থাকলে খাদ্যপণ্য এবং টেকনাফ থেকে কোনো খাদ্য পণ্য না পৌঁছালে খাদ্য সংকট দেখা দেবে প্রকট। এখানকার মানুষের কথা বিবেচনা করে জরুরি ভিত্তিতে সি ট্রাক ও সি অ্যাম্বুলেন্স চালু করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
টেকনাফ পৌরসভার কাযুকখালীযাখালের সার্ভিস ট্রলারের টিকিট বিক্রেতা মোহাম্মদ ফারুক বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এ নৌরুটে যাত্রীবাহী চলাচল বন্ধ রয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে পড়ার কারণে মালিক সমিতি ট্রলার চলাচল বন্ধ করে দেন। আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ট্রলার চলাচল শুরু করবে। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমদ জানান, দুর্ঘটনার আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফলে মালামাল আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বীপবাসী কর্মহীন অবস্থায় আরও দুর্বিষহ সময় পার করছেন। আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নৌযান চালু হবে। সর্বশেষ গত বুধবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে নিত্যপণ্য ও যাত্রী নিয়ে তিনটি সার্ভিস ট্রলার সেন্টমার্টিন গেছে।
সেন্টমার্টিনের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছৈয়দ আলম বলেন, জোয়ারের দ্বীপের চারদিকে ভাঙন ধরেছে। বিভিন্ন অংশ দিয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি লোকায়লে ঢুকে পড়েছে। জরুরি ভিত্তি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, তিন দিন ধরে নৌযান চলাচল বন্ধ। বাজারে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেন্টমার্টিন থেকে পারিবারিক কাজে টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে গিয়ে আটকা পড়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নৌযান চালু হবে।
শাহপরীর দ্বীপে আতঙ্ক ॥ টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপে ৭ নম্বর, ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে একটি এলাকা। এই এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস। চতুর্পাশে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী ঘেরা। তবে সাগর তীরবর্তী শাহপরীর দ্বীপের গোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়া ও জালিয়াপাড়া এলাকায় মানুষগুলো বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
বাধ ভেঙে গেলে পুরো দ্বীপের মানুষ বসতি হারাবে। সাগর তীরবর্তী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জুন মাসে ১৫১ কোটি টাকার খরচ করে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কিছু দিনের মধ্যেই বাধের সিসি ব্লকগুলো ধসে পড়ে। শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক জাহেদ হোসেন বলেন, ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের পশ্চিম পাশে ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। সেই ১ কিলোমিটার ভাঙা বাঁধ নির্মাণে ১০ বছরে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে পাউবো।
দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধ হয়ে ওঠেনি। ওই সময়ের জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীর দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার একরের চিংড়ির ঘের ও ফসলি জমি সাগরগর্ভে তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্তত চার হাজার ঘরবাড়ি। প্রায় তিন বছর আগে ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধটির সিসিব্লক ধসে পড়ার ঘটনায় দ্বীপের লোকজন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজে তাড়াহুড়া ছিল বলেও মন্তব্য করেন সাবরাং ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, প্রথম দিকে বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ টেকসই ছিল, কিন্তু দক্ষিণপাড়া অংশে যেখানে সাগরের আগ্রাসন বেশি, সেখানে এসে তাড়াহুড়া করে কাজ শেষ করায় বাঁধের কাঠামো দুর্বল হয়েছে।
প্যানেল হু