ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

পেট ভালো রাখতে চাইলে, প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ৯টি প্রোবায়োটিক পানীয়

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:১০, ২৬ জুলাই ২০২৫

পেট ভালো রাখতে চাইলে, প্রতিদিনের খাবারে রাখুন এই ৯টি প্রোবায়োটিক পানীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

আমাদের শরীরের ভিতরে, বিশেষ করে পেটের ভেতর, বসবাস করে কোটি কোটি জীবাণু—সবাই খারাপ নয়। বরং অনেক জীবাণু আছে যারা আমাদের পেট ও শরীর ভালো রাখতে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছে। এদেরই বলা হয় প্রোবায়োটিক, অর্থাৎ ‘ভালো ব্যাকটেরিয়া’।

এই ভালো ব্যাকটেরিয়া পেটের হজম ঠিক রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মন ভালো রাখতে সাহায্য করে, এমনকি প্রদাহও কমায়। এখন প্রশ্ন হলো—এই প্রোবায়োটিক আমরা পাব কোথায়? উত্তর হলো, খাবার ও পানীয় থেকে। বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট প্রোবায়োটিক পানীয় থেকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ৯টি প্রোবায়োটিক পানীয়ের কথা, যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনার পেট থাকবে হালকা, মন থাকবে ভালো।

 ১. কেফির – দইয়ের চেয়ে শক্তিশালী!
কেফির হলো দুধ দিয়ে তৈরি এক ধরনের ফারমেন্টেড পানীয়। টক-টক স্বাদ, একটু ঝাঁঝালো গন্ধ—তবে উপকারিতা অসাধারণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, কেফির খেলে হজম ভালো হয়, ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না এমন মানুষও আরাম পান, এমনকি রক্তে শর্করার পরিমাণও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আরও মজার কথা, এতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিক্যান্সার আর এমনকি ক্ষত সারানোরও উপাদান!

২. কম্বুচা – মিষ্টি চা থেকে তৈরি স্বাস্থ্যকর পানীয়
কম্বুচা বানানো হয় চিনি মেশানো চা, ইস্ট আর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটি খুব উপকারী। এটি আপনার অন্ত্রের উপকারী জীবাণুদের বাড়াতে সাহায্য করে, হজমের উন্নতি করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

তবে সাবধান—কম্বুচা অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না, কারণ এতে চিনির পরিমাণ কিছুটা বেশি আর সামান্য অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনও থাকতে পারে।

৩. দই জাতীয় পানীয় – সবার প্রিয় আর সহজলভ্য
যারা দুধ হজমে সমস্যা পান, তাদের জন্য লিকুইড দই বা দই-জাতীয় পানীয় দারুণ। এতে থাকে ল্যাকটোব্যাসিলাস ও বিফিডোব্যাকটেরিয়াম—এই জীবাণুগুলো হজমে সাহায্য করে, আর শরীরকে ফিট রাখে।

সকালবেলা এক গ্লাস প্রোবায়োটিক দই পান করলে সারাদিন পেট থাকে চনমনে।

৪. প্রোবায়োটিক দুধ – দুধেও থাকতে পারে ভালো ব্যাকটেরিয়া
গরুর দুধ হোক বা বাদামের দুধ—এগুলোতে এখন প্রোবায়োটিক যোগ করা হয়। এই দুধ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায় এবং অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে পারে।

৫. প্রোবায়োটিক জুস – স্বাদেও ভালো, উপকারেও
আপনি যদি ফল বা সবজির রস পছন্দ করেন, তাহলে প্রোবায়োটিক জুস হতে পারে আপনার নতুন প্রিয়। এতে থাকে L. acidophilus-এর মতো ব্যাকটেরিয়া, যা শুধু হজমই ঠিক রাখে না, বরং ডায়াবেটিস, স্থূলতা এমনকি কিছু ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সাহায্য করে।

৬. প্রোবায়োটিক পানি – সহজ আর হালকা পানীয়
যারা দুধজাত খাবার খেতে পারেন না, তাদের জন্য প্রোবায়োটিক পানি আদর্শ। সাধারণত ফ্লেভার যুক্ত এই পানি কম ক্যালরি ও কম চিনি যুক্ত হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রেফ্রিজারেটরে না রাখলে এর উপকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৭. বাটারমিল্ক – গ্রামবাংলার পুরোনো রেসিপি
আগেকার দিনে মাখন তোলার পর যে পাতলা দুধটা থাকত, সেটাই হলো আসল বাটারমিল্ক। এতে থাকে প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক। এটি হজমে সহায়তা করে এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলেও এর গুণাগুণ থাকে অটুট।

৮. প্রোবায়োটিক শট – এক চুমুকে ভালো থাকার পথ
এই ছোট ছোট বোতলে থাকে ঘন প্রোবায়োটিক—খুব অল্প পরিমাণেই অনেক উপকার। অনেক সময় এতে যোগ করা হয় হলুদ, আদা বা অন্য প্রাকৃতিক উপাদানও।

অফিস ব্যস্ত জীবনে সকালে এক ঢোক প্রোবায়োটিক শট খেয়েই দিন শুরু করতে পারেন।

৯. প্রোবায়োটিক সোডা ও সেল্টজার – সোডা, তবে স্বাস্থ্যকর
যারা কোমল পানীয় ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। এতে চিনির পরিমাণ কম, আবার ব্যাকটেরিয়াও উপকারী।
তবে মনে রাখতে হবে, সোডা যেহেতু সোডাই, তাই আইবিএস বা গ্যাসের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি ভালো নাও হতে পারে।

কেন খাবেন প্রোবায়োটিক পানীয়?
প্রোবায়োটিক শুধু পেটের জন্য নয়—এটি পুরো শরীরের জন্য উপকারী। এটি শরীরের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে শরীর থাকে সুস্থ, মন থাকে ফুরফুরে, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শক্তিশালী হয়।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখবেন—এই প্রোবায়োটিক পানীয়গুলো FDA (যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই নতুন কিছু শুরু করার আগে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।

 
 

মারিয়া

×