
ছবি: সংগৃহীত
“চিন্তার শক্তি আছে”—এই কথাটি হয়তো আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু কতটা গুরুত্ব দিয়ে আমরা প্রতিদিনের জীবনে চিন্তার প্রভাব অনুভব করি? যখন আমরা নেতিবাচকভাবে চিন্তা করি, তখন শুধু মন নয়, আমাদের জীবনযাত্রা, সম্পর্ক, কাজ—সব কিছুতেই তার ছায়া পড়ে। জীবন থমকে যায়। সময়ও যেন থেমে যায়। অথচ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের জীবনের গতি বদলে দিতে পারে। আমাদের মনে এনে দিতে পারে সাহস, আত্মবিশ্বাস, এবং নতুন আশার আলো।
নেতিবাচক চিন্তা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এই চিন্তাগুলো আমাদের দমন করবে, নাকি আমরা এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেব—সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরই।
প্রথম ধাপ: চিন্তাকে চিহ্নিত করা
অনেক সময় আমরা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারি না যে আমরা নেতিবাচক চিন্তার ফাঁদে পড়ে গেছি। তাই শুরুতে দরকার আত্মপর্যবেক্ষণ। চিন্তা আসছে—তাকে ধরে প্রশ্ন করুন:
এটা কি বাস্তবসম্মত?
এর কি কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আছে?
আমি কি অকারণে আতঙ্কিত হচ্ছি?
এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে অনেক নেতিবাচক চিন্তাই আসলে অবাস্তব এবং অযৌক্তিক।
দ্বিতীয় ধাপ: চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন
নেগেটিভ চিন্তাগুলো অনেক সময় মনে হয় বাস্তব। কিন্তু আসলে সেগুলো হয়তো ভুল ব্যাখ্যার ফল। ধরুন, এক বন্ধু হঠাৎ করেই আপনাকে উপেক্ষা করলো। আপনি ভাবলেন—“ও আমাকে অবহেলা করছে।” কিন্তু একটু ভাবুন, হয়তো সে ব্যস্ত ছিল। আপনি যদি তার জায়গায় থাকতেন, হয়তো আপনিও এমনটা করতেন। এভাবে অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দেখুন—দেখবেন নেতিবাচক ব্যাখ্যাগুলোর জোর কমে যাচ্ছে।
তৃতীয় ধাপ: বিকল্প ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তুলুন
নেগেটিভ চিন্তার জায়গায় যদি আপনি বিকল্প ইতিবাচক বাক্য তৈরি করেন এবং তা মনেপ্রাণে ধারণ করেন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনার চিন্তার ধারা বদলাবে। যেমন:
“আমি পারবো না” —> “আমি চেষ্টা করলে উন্নতি করতে পারি।”
“সবাই আমাকে অপছন্দ করে” —> “সবাই না, কিছু মানুষ আমার পাশে আছে।”
চতুর্থ ধাপ: মনোযোগ সরিয়ে ফেলুন – ‘ডিস্ট্রাকশন কৌশল’
মন যখন নেতিবাচক চিন্তায় আটকে যায়, তখন তাকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া জরুরি। প্রিয় গান শুনুন, বই পড়ুন, ব্যায়াম করুন, নামাজ পড়ুন বা ধ্যান করুন। বাগান করা, রান্না করা, বা শখের কাজ—যেকোনো কিছুতেই নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
পঞ্চম ধাপ: ধ্যান এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত অনুশীলন
নেগেটিভ চিন্তাগুলো থামাতে মেডিটেশন বা মাইন্ডফুলনেস অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন মাত্র ৫–১০ মিনিট করে ধ্যান করুন। মনকে প্রশান্ত রাখুন। শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। মস্তিষ্কের চিন্তার গতি হ্রাস পায়, এবং নেতিবাচকতা কমে আসে।
ষষ্ঠ ধাপ: নেতিবাচকতার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করুন
অনেক সময় অতীতের কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা, বিশ্বাসঘাতকতা, বা ব্যর্থতা থেকে ভবিষ্যৎ নিয়ে অকারণ ভয় জন্মে। অথচ অতীতে যা ঘটেছে তা ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নয়। তাই চিন্তার পেছনের উৎস খুঁজে বের করুন, ব্যর্থতার ভয়কে মোকাবিলা করতে তথ্য সংগ্রহ, প্রস্তুতি ও আত্মবিশ্বাসে ভর করে এগিয়ে যান।
সপ্তম ধাপ: কৃতজ্ঞতা চর্চা করুন
নেতিবাচক চিন্তার প্রবণতা কমাতে জীবনের ভালো দিকগুলোর দিকে তাকান। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন:
আজকে আমার ভালো কী ঘটেছে?
আমি কাদের ভালোবাসা পেয়েছি?
আমি আজ কী শিখেছি?
এই ছোট ছোট ধন্যবাদ আপনাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে তুলবে।
অতিরিক্ত কিছু সচেতনতামূলক অভ্যাস
পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
ইতিবাচক মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানো।
অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যদি নেতিবাচক চিন্তা অতিরিক্ত হয়ে যায় এবং বিষণ্নতা বা উদ্বেগের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে দেরি না করে একজন পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া উচিত।
শেখ ফরিদ