
ছবি: সংগৃহীত
এবার থাইল্যান্ডে রাশিয়ার তৈরি বিএম-২১ রকেট দিয়ে আঘাত হেনেছে কম্বোডিয়া। সংঘাতের প্রথম দিনই এফ-৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কম্বোডিয়ায় হামলা চালিয়েছিল থাইল্যান্ড। সময় যত গড়াচ্ছে, নতুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষ।
এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুই দেশের ৩০ জনের বেশি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চাইলেও, তৃতীয় পক্ষের কোনো মধ্যস্থতা মানবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে থাইল্যান্ড। প্রাণ হাতে করে দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চল ছেড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ সরে গেছে। সীমান্তে জড়ো হচ্ছে ট্রাক, সাঁজোয়া যান ও ট্যাংকসহ নানা যুদ্ধাস্ত্র।
সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শুক্রবার ভোরে আলো ফোটার আগেই ভয়াবহ হামলা চালায় কম্বোডিয়া। থাই সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলা ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ১২টি এলাকায়। বাদ যাচ্ছে না স্কুল, হাসপাতালসহ বেসামরিক স্থাপনাও।
ব্যাংকক দাবি করেছে, শুক্রবারের হামলায় কম্বোডিয়া রাশিয়ান বিএম-২১ রকেট ও কামানের গোলা ব্যবহার করেছে।
অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার অভিযোগ—থাইল্যান্ড ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করছে দেশটির উপর।
এসব হামলার দায় কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেনের সরকারের উপর চাপিয়েছে থাইল্যান্ড। থাই সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বেসামরিক মানুষের উপর নির্বিচার হামলা যুদ্ধাপরাধ "শিফ করো। লাইফকে লিফ করো"—এই স্লোগানসহ বার্তা দিয়েছে থাইল্যান্ড।
চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ড থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত অঞ্চল থেকে ৩৫ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রাণহানির হিসাবে—থাইল্যান্ডে ৬ সেনা ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক, আর কম্বোডিয়ায় ৫ সৈন্য ও ৮ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন।
সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের বিরোধ শত বছরের বেশি পুরনো। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটি পরিচিত "এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল" বা "পান্না ত্রিভুজ" নামে। এই অঞ্চলে ১১ শতকে নির্মিত 'ময়ানথম' মন্দিরকে ঘিরেই মূলত ২০০৮ সালে সংঘাতের সূচনা।
গত ১৫ বছর দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারণে আর সংঘাতে জড়ায়নি। তবে সম্প্রতি সীমান্তে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হন একজন থাই সেনা। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ শুরু হয়।
প্রথম দিনেই থাইল্যান্ড এফ-৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে কম্বোডিয়ায় হামলা চালায়।
চলমান সংঘাত থামাতে আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং থাইল্যান্ডের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মালয়েশিয়া উভয় দেশকে সংলাপের টেবিলে বসার প্রস্তাব দিলেও, সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে থাই মন্ত্রণালয়।
তাদের অবস্থান পরিষ্কার—তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা নয়, কেবল দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই হবে এই সংকট সমাধানের পথ।
পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত। দুটি দেশের মধ্যে পুরনো সীমান্ত বিরোধ আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে, যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
শেখ ফরিদ