ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

হাওয়াইয়ে হাজার হাজার মশা ফেলা হচ্ছে আকাশ থেকে! কেন?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ২৬ জুলাই ২০২৫

হাওয়াইয়ে হাজার হাজার মশা ফেলা হচ্ছে আকাশ থেকে! কেন?

ছবি: সংগৃহীত

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের আকাশে হঠাৎ করে ড্রোন ও হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মশা। তবে এটা কোনো রোগ ছড়ানোর ষড়যন্ত্র নয়, বরং প্রকৃতি রক্ষার এক অভিনব উদ্যোগ। এসব মশা ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়েছে তাও আবার এমনভাবে যাতে তারা স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলেও বংশবৃদ্ধি করতে না পারে। কারণ একটাই, হাওয়াইয়ের সংকটাপন্ন হানিক্রিপার পাখিদের বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা।

এক সময় হাওয়াইয়ে ৫০টির বেশি হানিক্রিপার পাখির প্রজাতি ছিল, বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ১৭টি, যাদের বেশিরভাগই মহাবিপন্ন। তাদের প্রধান শত্রু হলো অ্যাভিয়ান ম্যালেরিয়া। এটি এক ধরনের প্রাণঘাতী রোগ যা ছড়ায় মশার মাধ্যমে। স্থানীয় পাখিদের শরীরে এই রোগ প্রতিরোধের কোনো জিনগত সক্ষমতা নেই, ফলে তারা সহজেই মারা যাচ্ছে।

এই মশাগুলো হাওয়াইয়ের নিজস্ব নয়। ১৮২৬ সালে তিমি শিকারের জাহাজে চেপে মশারা প্রথম হাওয়াইতে আসে। তারপর থেকে দেশীয় পাখিদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে তারা একের পর এক প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে।

মার্কিন সংস্থা American Bird Conservancy ও Birds, Not Mosquitoes নামের একটি পার্টনারশিপ মিলে চালাচ্ছে এক বৈজ্ঞানিক প্রকল্প, যার মাধ্যমে ড্রোন ও হেলিকপ্টার দিয়ে সপ্তাহে ১০ লক্ষেরও বেশি ল্যাব-প্রস্তুত পুরুষ মশা ছাড়া হচ্ছে। এসব মশা 'Wolbachia' নামে একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বহন করে, যা স্ত্রী মশার সঙ্গে প্রজননে নিষ্ক্রিয় ডিম তৈরি করে। এর ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্য মশার সংখ্যা কমে আসবে।

দুরূহ পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার পাঠানো ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। ড্রোন সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে এনেছে। এটি কম খরচে, পরিবেশবান্ধব এবং ঝুঁকিমুক্ত। এ ছাড়া আবহাওয়া খারাপ থাকলেও ছোট আকারের ড্রোন দিয়ে সহজেই কাজ চালানো যাচ্ছে।

২০২৪ সালে ‘আকিকিকি’ নামের একটি পাখি কার্যত বন্য পরিবেশে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই পাখিটিরও বন্য পরিবেশে মাত্র ১০০টি সদস্য অবশিষ্ট আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে সামনের কয়েক বছরেই আরো প্রজাতি চিরতরে হারিয়ে যাবে।

এই পদ্ধতি সফল হলে পাখিদের প্রজননের জন্য সময় পাওয়া যাবে এবং তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে বংশবিস্তার করতে পারবে। কিছু পাখির মধ্যে ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতার লক্ষণ দেখা গেছে। এ ছাড়া বন্দিত্বে থাকা কিছু প্রজাতিকে পুনরায় প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়ার পথও খুলে যেতে পারে।

এই প্রকল্পকে ঘিরে অনেক প্রত্যাশা, আবার শঙ্কাও কম নয়। ড. ক্রিস ফার্মার বলেন, “এই দশকে যদি আমরা পদক্ষেপ না নিই, তাহলে এই পাখিগুলো ভবিষ্যতে আর থাকবে না। আমাদের প্রজন্মই তাদের রক্ষার শেষ সুযোগ।”

 

মুমু ২

×