
ছবিঃ সংগৃহীত
বাবা-মায়ের ডিভোর্স হলে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে আসে, তা হলো—সন্তানের দায়িত্ব কে নেবে? সন্তান কার কাছে থাকবে? খরচ কে দেবে? শিক্ষার ব্যয়, চিকিৎসা, লালন-পালন—এসব কিভাবে চলবে? বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, এসব প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আঞ্জুম আরা লিমা ২০২৫ সালের পারিবারিক বাস্তবতা ও মুসলিম পারিবারিক আইনের প্রেক্ষাপটে সন্তানের অধিকার ও বাবার দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমরা ২০২৫ এ এসে দেখছি যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাবা-মা দুজনের মধ্যে যদি একটা নির্দিষ্ট সময় পরে মনমানসিকতা না মিলে, তাদের মধ্যে কোনো কারণে যদি এমন হয় যে সংসারটা আর কন্টিনিউ করা সম্ভব হচ্ছে না, তখন সমস্যা তৈরি হয়।”
তিনি উল্লেখ করেন, “অনেক সময় দেখা যায়, তাদের একাধিক সন্তান রয়েছে। এই ক্ষেত্রেও একটি বড় কনফিউশন তৈরি হয়—ডিভোর্স হলে সন্তানদের ভবিষ্যৎ কী হবে? সন্তানরা কার কাছে থাকবে? তাদের খরচ কে বহন করবে?”
ব্যারিস্টার লিমা বলেন, “আমি সেপারেশনের কথাটি আজকে বলবো না কারণ আমাদের মুসলিম আইনে ‘সেপারেশন’ বলে কিছু নেই। মুসলিম আইনে শুধু দুইটি বিষয় আছে—বিয়ে ও ডিভোর্স। তাই লং ডিস্টেন্সে আলাদা থেকে সন্তান পালন বা আলাদা থাকা এসবের কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে মুসলিম পারিবারিক আইন অর্ডিন্যান্সও এই ধরণের আলাদা থাকা বা ‘সেপারেশন’ কনসেপ্টকে সমর্থন করে না।”
সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ওঠে, সন্তান কোথায় থাকবে? কে তার ভরণপোষণ দেবে? তার শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান—সবকিছু কে নিশ্চিত করবে?”
তিনি পরিষ্কার করে বলেন, “একজন বাবা শুধুমাত্র সন্তানের বায়োলজিকাল গার্ডিয়ানই নন, তিনি আইন অনুযায়ী ন্যাচারাল গার্ডিয়ানও।”
তিনি জানান, “বাংলাদেশের আইনে বলা আছে, মেয়ে সন্তান ৯ বছর এবং ছেলে সন্তান ৭ বছর পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকতে পারে। যদি বাবা এই সময় ভিজিট করতে চান, তাহলে আদালত তাকে ‘ভিজিটিং রাইটস’ দিয়ে থাকে। সেটা সপ্তাহে দুদিন অথবা মাসে দুদিন হতে পারে, যা পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক হয়।”
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এমনকি যদি সন্তান মায়ের কাছে থাকে, তবুও বাবার উপর পূর্ণ দায়িত্ব বর্তায় সন্তানের খরচ বহনের। আইন অনুযায়ী, যতদিন সন্তান সাবালক না হয়, ততদিন পর্যন্ত তার থাকা, খাওয়া, শিক্ষা ও ভরণপোষণ বাবাকেই নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “এই দায়িত্ব মায়ের একার নয়। এটি আইনগতভাবে বাবার শতভাগ দায়িত্ব।”
সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যারিস্টার লিমা বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেন, সন্তানেরা ভবিষ্যতে বাবার সম্পত্তি থেকে কীভাবে অধিকার পাবে? আমার জবাব—এটা কোনো আলাদা আলোচনা করার বিষয়ই নয়।”
তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে আমি বলবো তাকে আলাদাভাবে তাকে রেস্পন্সিবল করার আইনগতভাবে লায়েবল করাটাই দু:খজনক। কারণ এই জিনিস তাকে আলাদা করে বলার কিছু নেই৷ এটা একটা বাচ্চার অধিকার তার বাবার কাছ থেকে। এবং এটা শুধুমাত্র আমাদের দেশের নাগরিক হিসেবে তার অধিকার না। এটা কিন্তু সে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কোরআনে এই হকটা তার বাবার উপরে তার সন্তানদের দেওয়া আছে৷ বাবা মায়ের ডিভোর্স হতে পারে কিন্তু সেটার সাথে তার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়া এই জিনিসটা কোনোভাবেই আসেনা। অর্থাৎ এইক্ষেত্রে আমরা স্পষ্ট বলতে পারি বাবা মা একসাথে না থাকলেও সন্তানের পুরো খরচ তার বাবাকেই চালাতে হবে।”
সাক্ষাৎকারের শেষে ব্যারিস্টার লিমা বলেন, “বাবা-মা ডিভোর্স করলেও সন্তানের খরচ চালানোর দায়িত্ব বাবার উপরেই থাকবে। এটা তার নৈতিক, ধর্মীয় ও আইনগত দায়। এই দায়িত্ব কোনোভাবে অস্বীকার করা যাবে না।”
নোভা