
ছবি: সংগৃহীত।
পরিবারের অভিভাবকের মৃত্যু যে কোনো পরিবারের জন্যই অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি অধ্যায়। তবে এই মৃত্যু শুধু আবেগ নয়, আইনি ও সম্পত্তির প্রশ্নেও নতুন জটিলতার সৃষ্টি করে। মৃত ব্যক্তির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি যেমন জমি, ব্যাংকের টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, গাড়ি ইত্যাদি বৈধভাবে গ্রহণ করতে হলে প্রয়োজন হয় উত্তরাধিকার সনদ বা সাকসেশন সার্টিফিকেট।
উত্তরাধিকার সনদ কী?
সাকসেশন আইন ১৯০০-এর ৩৭০ থেকে ৩৮৯ ধারায় উত্তরাধিকার সনদের বিধান দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার বৈধ ওয়ারিশদের নাম আদালত কর্তৃক নির্ধারিত একটি আইনি দলিলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, যেটিই মূলত উত্তরাধিকার সনদ।
এই সনদের মাধ্যমে ওয়ারিশগণ মৃত ব্যক্তির ব্যাংকের টাকা তুলতে পারেন, শেয়ার বা ডিবেঞ্চার নিজেদের নামে নিতে পারেন, জমি বা গাড়ির মালিকানা নিজেদের নামে রেজিস্ট্রি করাতে পারেন।
কাদের এই সনদের জন্য আবেদন করার অধিকার আছে?
মৃত ব্যক্তি যদি মুসলিম হন, তবে মুসলিম পারিবারিক উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তার স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ অন্যান্য বৈধ ওয়ারিশরা এই সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ ধর্মের আইন অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়।
কারো নাম বাদ গেলে কী হবে?
কোনো ওয়ারিশকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে সনদ নেওয়া হলে সেটি আইনি ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুতর অপরাধ। এতে বঞ্চিত ব্যক্তি আদালতের কাছে সনদ বাতিল চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এছাড়া কোনো সম্পত্তি বাদ পড়ে গেলে তা পরবর্তীতে বাড়ানোর (বর্ধিতকরণ) আবেদনও করা যায়।
কত খরচ পড়ে?
সাকসেশন সার্টিফিকেটের জন্য খরচ নির্ভর করে সম্পত্তির পরিমাণ ও মূল্যের ওপর:
-
২০,০০০ টাকা পর্যন্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো কোর্ট ফি নেই।
-
২০,০০০–১ লাখ টাকার মধ্যে হলে ১% কোর্ট ফি।
-
১ লাখ টাকার বেশি হলে ২% কোর্ট ফি দিতে হয়।
-
এছাড়াও আইনজীবীর সম্মানী ও ফাইলিং খরচ যুক্ত হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- স্থানীয় চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত ওয়ারিশান সনদ
- সিটি কর্পোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ
- কবরস্থানে সমাহিত হওয়ার প্রমাণপত্র (যদি পাওয়া যায়)
- হাসপাতাল/ক্লিনিকের মৃত্যুপ্রমাণপত্র
- যে সম্পত্তিগুলোর জন্য আবেদন করা হচ্ছে, তার প্রমাণপত্র (জমির কাগজ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি)
কত দিন লাগে?
সাধারণত তিনটি ধাপে আদালতের শুনানি শেষ হয়:
-
ফাইলিং তারিখ
-
সমন ফেরতের তারিখ
-
জবানবন্দির তারিখ
মোটমুটি ভাবে ১০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সনদ ইস্যু হয়ে থাকে। একাধিক ওয়ারিশ থাকলে যেকোনো একজনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে মামলা পরিচালনা করা যায়।
আপিলের সুযোগ
প্রাথমিকভাবে নিম্ন আদালতে আবেদন করা হয়। যদি আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তবে জেলা জজ আদালতে আপিল করার সুযোগ থাকে।
নুসরাত