
ছবি: হিন্দুস্তান টাইমস
গাজা ভিত্তিক ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ ইসরায়েলি বাহিনীর কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকির মুখে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF)-এর আরবি মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেই তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তোলায় এ আশঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে। ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক বলেছেন,
“এটি আমার হত্যা পরিকল্পনার সূচনা মাত্র।”
আল-জাজিরা চ্যানেলের হয়ে কাজ করা আনাসের পরিবার ইতোমধ্যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবুও তিনি গাজা থেকে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (CPJ) এবং আল-জাজিরা একযোগে আনাসের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। CPJ জানিয়েছে, “আভিচাই আদ্রেই-এর প্রচারণা শুধু ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা নয়—এটি একটি সরাসরি প্রাণঘাতী হুমকি।”
আল-শরিফ বলেন, “আমি যা কভার করছি, তা ইসরায়েলের দখলদারির অন্যায় কার্যকলাপ বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরছে—এটাই তাদের রাগের কারণ।”
আভিচাই আদ্রেই একাধিক ভিডিওতে দাবি করেন, আনাস হামাসের সদস্য এবং তার সাংবাদিকতা “বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসবাদ”।
২১-২৪ জুলাইয়ের ভিডিওতে তিনি বলেন, “আনাসের ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর জন্য কান্না এক অভিনয়—একটি ‘মিথ্যা নাটক’। তিনি হামাসের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন।”
আল-শরিফের আগের এক পোস্টে লেখা ছিল: “গাজার একজন নাগরিক হিসেবে আমি যে কোনো উপায়ে যুদ্ধবিরতির পক্ষে। আমরা বাঁচছি না, শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছি।”
আল জাজিরা ও CPJ-এর প্রতিক্রিয়া
আল জাজিরা এক বিবৃতিতে জানায়—“গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে। এখন আনাসের জীবন হুমকির মুখে।”
CPJ-এর আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, “IDF-এর এই বক্তব্য আসলে একজন সাংবাদিককে হত্যার জন্য জনমত তৈরির প্রচেষ্টা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
গাজায় সাংবাদিক হত্যা নিয়ে অভিযোগ
CPJ বলেছে, বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ নিষেধ থাকায় স্থানীয় সাংবাদিকদেরই একমাত্র তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল এরই মধ্যে কমপক্ষে চারজন আল জাজিরা কর্মীকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ:
হামজা আল দাহদুহ
ইসমাইল আল ঘুল
রামি আল রাফি
হোসাম শাবাত
যুদ্ধ পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল অক্টোবর ৭, ২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। তবে এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষ ও জাতিসংঘ সম্মেলন
২০২৫ সালের শুরু থেকেই গাজায় দুর্ভিক্ষে ১১০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ২৮-৩০ জুলাই নিউইয়র্কে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে, যাতে শান্তির আহ্বান এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে।
তবে ইসরায়েল এবং তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না। পাশাপাশি তারা হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনাও স্থগিত করেছে, কারণ তারা বলছে, “হামাসের দাবি বাস্তবসম্মত নয়।”
সূত্রঃ হিন্দুস্তান টাইমস
নোভা