ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ফ্যাটি লিভার কেবল লিভারের নয়, করে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্রও বিপর্যয়

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ২৬ জুলাই ২০২৫

ফ্যাটি লিভার কেবল লিভারের নয়, করে মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্রও  বিপর্যয়

ছবি: সংগৃহীত

 

যকৃৎ (লিভার) হলো মানুষের শরীরের অন্যতম সহনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তবে যখন এতে অতিরিক্ত চর্বি জমে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যেসব মানুষ মদ্যপান করেন না, তাদের মধ্যেও ফ্যাটি লিভার বা MASLD (Metabolic Dysfunction-Associated Steatotic Liver Disease) দেখা যায়, যা আগে NAFLD নামে পরিচিত ছিল।

এই সমস্যা নীরবে শরীরে এমন কিছু রোগ ডেকে আনে, যেগুলো সময়মতো চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে।

১. বিপাকীয় প্রদাহ (Metabolic Inflammation)

ফ্যাটি লিভার প্রাথমিকভাবে নিরীহ মনে হলেও, এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে MASH (Metabolic Dysfunction–Associated Steatohepatitis)-এ রূপ নিতে পারে। তখন যকৃতে প্রদাহ এবং কোষের ক্ষতি শুরু হয়। ফলে তৈরি হয় ফাইব্রোসিস (scarring), যা এক পর্যায়ে সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারেও পরিণত হতে পারে।

উল্লেখযোগ্য গবেষণা: গবেষণা বলছে, MASH থাকলে ১০ বছরের মধ্যে ২০–৩০% রোগীর সিরোসিসে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। Journal of Hepatology

২. হৃদরোগের ঝুঁকি

ফ্যাটি লিভার থাকা মানেই কেবল যকৃতের সমস্যা নয় এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কাও বাড়িয়ে দেয়। NAFLD রোগীদের মধ্যে হৃদরোগে মৃত্যুহার প্রায় ১.৫ থেকে ২ গুণ বেশি বলে জানায় গবেষণা।

বিশেষজ্ঞ মত: “যত বেশি যকৃত চর্বিযুক্ত হয়, তত বেশি তা রক্তনালীর গঠনে সমস্যা তৈরি করে।” Dr. Rohit Loomba, Hepatologist, UCSD School of Medicine

 

৩. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও ডায়াবেটিস

যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে, ফলে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়। ডায়াবেটিস থাকলে ফ্যাটি লিভার আরও দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে।

উল্লেখযোগ্য তথ্য: “NAFLD রোগীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।” The Lancet Diabetes & Endocrinology

 

৪. কিডনি রোগ (CKD)

ফ্যাটি লিভার এবং ডায়াবেটিস একসঙ্গে থাকলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। বিশেষ করে যাদের লিভারে ইতিমধ্যে ফাইব্রোসিস শুরু হয়েছে, তাদের কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

 

৫. হরমোনজনিত সমস্যা

ফ্যাটি লিভার PCOS, হাইপোথাইরয়েডিজম, ও অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যার সঙ্গেও জড়িত। এমনকি ওজন স্বাভাবিক হলেও যদি বিপাকীয় সমস্যা থাকে, তবে ফ্যাটি লিভার হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ মত: “ফ্যাটি লিভার হচ্ছে মেটাবলিক সিনড্রোমের একটি মুখ্য চিহ্ন।” Dr. Elisabetta Bugianesi, University of Turin

 

৬. কবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

নিচের যেকোনো উপসর্গ বা ঝুঁকি থাকলে অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন:

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন

টাইপ ২ ডায়াবেটিস

উচ্চ রক্তচাপ

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)

রক্ত পরীক্ষায় লিভার এনজাইম বেশি

রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্লাড টেস্ট, আলট্রাসনোগ্রাম, এমনকি প্রয়োজনে লিভার বায়োপসি প্রয়োজন হতে পারে।

 

বর্তমানে বিশ্বে প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১৮% মানুষ জানেন তারা আক্রান্ত! প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করলে লিভার নিজেই নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু একবার যদি ফাইব্রোসিস শুরু হয়, তাহলে জটিলতা বেড়ে যায় এবং চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে।

ফ্যাটি লিভারকে অবহেলা করবেন না। এটি কেবল যকৃতের নয়, বরং সমগ্র শরীরের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতা জরুরি।

 

তথ্যসূত্র:

  • The Lancet
  • Journal of Hepatology
  • American Association for the Study of Liver Diseases (AASLD)
  • Mayo Clinic

আঁখি

×