
ছবি: প্রতীকী
ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসে। অনেকে দীর্ঘদিন ধূমপান করার পর যখন নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকেই মনে করেন, ধূমপান ছেড়ে দিলেই শরীর এবং বিশেষ করে ফুসফুস পুরোপুরি আগের মতো সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু আসল সত্যি কিছুটা জটিল।
ধূমপান ছাড়ার পর ফুসফুসে যে ক্ষতি হয়েছে, তা একেবারে পুরোপুরি মুছে ফেলা সম্ভব না হলেও, অনেকখানি উন্নতি ঘটে। প্রথমত, ধূমপান বন্ধ করার কিছু ঘণ্টার মধ্যেই শরীরে পজিটিভ পরিবর্তন শুরু হয়। রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কমে আসে এবং অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা সহজ হয়।
ধীরে ধীরে ফুসফুস নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে। ধূমপানের কারণে ফুসফুসে জমে থাকা কফ ও ক্ষতিকর পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। যারা অনেক বছর ধরে ধূমপান করেছেন, তাদের ফুসফুসে সিলিয়া নামক ছোট ছোট চুলের মতো গঠনগুলো নষ্ট হয়ে যায়, যা সাধারণত কফ ও ধুলোবালি পরিষ্কার করে। ধূমপান বন্ধ করার কয়েক মাস পর এই সিলিয়াগুলো আবার ধীরে ধীরে কাজ করতে শুরু করে।
তবে বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। ফুসফুসে যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে গেছে, বিশেষ করে যদি ফুসফুসের কোষে স্থায়ী পরিবর্তন বা ক্ষত তৈরি হয়ে থাকে, তা পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না। ধূমপানজনিত ক্যান্সার, সিওপিডি (COPD), বা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ একবার শুরু হলে তা চিরস্থায়ী হয়ে যেতে পারে, এমনকি ধূমপান ছাড়ার পরেও। তবে এসব রোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায় ধূমপান বন্ধ করার মাধ্যমে।
যদি কেউ তরুণ বয়সে ধূমপান শুরু করে এবং কয়েক বছর পরই সেটা ছেড়ে দেয়, তাহলে তার ফুসফুস স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার যদি কেউ ২০-৩০ বছর ধরে প্রতিদিন অনেক সিগারেট খায় এবং পরে ধূমপান ছাড়ে, তবে তার ফুসফুসে যতটা ক্ষতি হয়ে গেছে, তার কিছুটা হয়তো সারিয়ে তোলা সম্ভব, কিন্তু পুরোপুরি আগের মতো হবে না।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান ছাড়ার ১০ থেকে ১৫ বছর পর একজন মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে, এমনকি একজন অধূমপায়ীর কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে তার বয়স, কতদিন ধূমপান করেছে এবং অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে কি না তার ওপর।
ফুসফুস পুরোপুরি ভালো হবে কি না, সেটা নির্ভর করে আরো কিছু বিষয়ের ওপর। যেমন, ধূমপান ছাড়ার পর ব্যক্তি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করছে কিনা। যথেষ্ট পানি পান, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং দূষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা—এসব অভ্যাস ফুসফুসের পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখে।
ধূমপান ছাড়লেই ফুসফুসের অবস্থা অনেকটাই ভালো হয়। অনেক ক্ষতি কিছুটা ঠিক হয়, কিছু ক্ষতি স্থায়ী থেকে যায়। তবে যত দ্রুত ধূমপান ছাড়া যায়, তত বেশি সুফল পাওয়া যায়। তাই দেরি না করে ধূমপান বন্ধ করাই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। এটি শুধু ফুসফুস নয়, বরং পুরো শরীরের জন্যই উপকারী। ধূমপান থেকে মুক্ত হওয়া মানে সুস্থ জীবনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।
এম.কে.