
ছবিঃ সংগৃহীত
পটুয়াখালীতে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে অংশ না নিয়েও বশির সরদার (৪০) নামের এক মৃত ব্যক্তির নাম শহীদদের তালিকায় উঠে এসেছে। কীভাবে তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো—এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসার পর ভুয়া শহীদের নাম বাতিল এবং সরকার থেকে দেওয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিত করার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
বশির সরদার পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের সেকান্দার সরদারের ছেলে। তিনি গত বছর ১৫ নভেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত বশির সরদারের বড় ভাই নাসির উদ্দিন ‘তার ভাই বশির সরদার শহীদ নন’ মর্মে জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) নাসির উদ্দিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়।
এ বিষয়ে ‘‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটির’’ সদস্য সচিব ও পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ওই সভায় উপস্থিত ছিলাম না, পরে এখানে যোগদান করেছি। তবে বিষয়টি যাচাই করে তার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।”
কমিটির অপর সদস্য, পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইউএনও ইফফাত আরা জামান উর্মি বলেন, “মূলত যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন পরিস্থিতির কারণে তৎক্ষণাৎ যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে নিহত বশির সরদারের মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায়, আবেদনে আন্দোলনে মৃত্যুর যে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তার এক মাস আগেই তিনি পায়ের সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে নিহতের স্ত্রী ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বললে তাঁদের বক্তব্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তখনই তার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করা হয়।”
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও ছাত্র সমন্বয়ক মো. সজিবুল ইসলাম সালমান বলেন, “আমি কমিটির সদস্য হলেও বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব ছিল কমিটির সদস্য সচিব তথা সিভিল সার্জনের। তখন আমি আন্দোলনের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”
মৃত বশির সরদারের স্ত্রী মোসা. রেবা আক্তার জানান, “ওই সময়ে আমার ভাশুর নাসির উদ্দিন সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করে এনে আমাকে একদিন ডিসি অফিসে নিয়ে যান। সেখানে আমি ভয় পেয়ে মিথ্যা কথা বলি। আমার স্বামী বশির সরদার গত বছরের ৩ জুলাই পটুয়াখালী চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে আহত হন। পরে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে পচন ধরলে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর তিনি মারা যান।”
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত তিনি মোট ১২ লাখ ৭ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছেন। এর মধ্যে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ২ লাখ টাকার জমি কিনেছেন, বাকি টাকা তার কাছেই রয়েছে।
উল্লেখ্য, ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।
ইমরান