
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন থেকে যে পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার করতে যাবেন তার যথাযথ আইডেন্টিটি থাকতে হবে। নেমপ্লেট থাকতে হবে, আইডি কার্ড সঙ্গে থাকতে হবে এবং চাওয়া মাত্র এসব দেখাতে হবে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর থানায় এনে পরিবারকে জানাতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়া যাবে না। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ বোধ করলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কে গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেপ্তারের পর পরিবারের কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে সেসব তথ্য লিখিত থাকতে হবে। এছাড়া গ্রেপ্তারদের তালিকা পুলিশ সদর দপ্তরে থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে ফৌজদারি কার্যবিধিতে। আর গ্রেপ্তার করার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের তা জানানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এতদিন তা সিআরপিসিতে ছিল না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ বা পরোয়ানা ছাড়াই যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া ছিল পুলিশের হাতে। ওই ধারার স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগের কারণে মানবাধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এবারের সংশোধনে ৫৪ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে এবং সংশোধনে সিআরপিসিতে অনলাইনে বেইল বন্ড দাখিল এবং ডিজিটাল সমনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে পুলিশের সামনে অপরাধ করেছেন এমন হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারবে। অথবা পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাকেও গ্রেপ্তার করতে পারবে।
২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের আশান্বিত করেছে। এ রকম একটি ঐতিহাসিক ঘটনার পর নৈরাজ্য চলতে থাকলে তা গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট বা চেতনা ম্লান করে দিতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর সাফল্যে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তিকে দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে। কাজেই একটি সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের সবাইকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হতে হবে। কারণ আমাদের দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হলে সমাজে কখনই শান্তি আসবে না, আর শান্তি ছাড়া দেশের প্রকৃত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি তথা কোনো টেকসই উন্নয়নই সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এটি শুধু সরকার বা বিচার বিভাগের একক দায়িত্ব নয়, নাগরিক সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং সাধারণ জনগণকেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরি।
প্যানেল/মো.