ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

মানব মস্তিষ্ক থেকে বের হয় আলো! নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

প্রকাশিত: ০২:০৭, ২৭ জুলাই ২০২৫

মানব মস্তিষ্ক থেকে বের হয় আলো! নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ তথ্য

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের মস্তিষ্ক আলো নিঃসরণ করেতা-ও আবার এতটাই দুর্বল যে তা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিশেষ যন্ত্রে তা শনাক্ত করা সম্ভব। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষীণ আলোকরশ্মি খুলে দিতে পারে মস্তিষ্কের কার্যক্রম বোঝার এক নতুন দ্বার।

iScience সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের মস্তিষ্ক থেকে নির্গত এই ‘আলোর ঝিলিক’ খুলি ভেদ করে বাইরে পৌঁছাতে পারে এবং মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকরা এই পদ্ধতিকে নাম দিয়েছেন ‘ফটোএনসেফালোগ্রাফি’, অর্থাৎ আলো ব্যবহার করে মস্তিষ্ক পর্যবেক্ষণ।

আলোর এই নিঃসরণ কী?

এই ক্ষীণ আলোর রশ্মিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Ultraweak Photon Emissions (UPEs)। এটি কোনো জৈব রাসায়নিক পদার্থ থেকে নয়, বরং স্বাভাবিক কোষীয় বিপাকক্রিয়ার সময় উৎপন্ন হয়। এটি জোনাকি পোকার আলো বা বায়োলুমিনেসেন্স-এর মতো নয়। বরং দৃশ্যমান আলোর তুলনায় এর তীব্রতা প্রায় ১০ লাখ গুণ কম।

গবেষণায় বলা হয়, জীবন্ত টিস্যু থেকে এই ধরনের আলোকরশ্মি সবসময়ই তৈরি হয়, এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম ও সুস্থতার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতে পারে।

কীভাবে চালানো হয় গবেষণা?

আলগোমা বিশ্ববিদ্যালয়, টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় এবং উইলফ্রিড লরিয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ককে সম্পূর্ণ অন্ধকার কক্ষে বসিয়ে পরীক্ষাটি চালান। অংশগ্রহণকারীদের মাথায় রাখা হয় বিশেষ আলোক সংবেদনশীল সেন্সর এবং EEG ক্যাপ, যা মস্তিষ্কের তরঙ্গ রেকর্ড করে।

তারা দেখতে পান, অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্ক থেকে নির্গত ফোটন বা আলোকরশ্মি পরিবেশের অন্যান্য ব্যাকগ্রাউন্ড আলোর চেয়ে আলাদা এবং তা নির্দিষ্ট ছন্দে ওঠানামা করে। বিশেষ করে মস্তিষ্কের যে অঞ্চলগুলোতে চাক্ষুষ বা শ্রাব্য তথ্য প্রক্রিয়াকরণ হয়, সেখানেই এই আলো সবচেয়ে বেশি ওঠানামা করে।

চোখ খোলা নাকি বন্ধআলোর তারতম্য

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, চোখ খোলা কিংবা বন্ধ থাকা বা ধ্বনি শোনা ইত্যাদির ভিত্তিতে আলোর নিঃসরণে পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ, মস্তিষ্কের সক্রিয়তার ওপর এই ক্ষীণ আলো সরাসরি প্রভাবিত হয়।

ভবিষ্যতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে

যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা, তবে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই আলোর নিঃসরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে নন-ইনভেসিভ (অস্ত্রোপচারবিহীন) উপায়ে মস্তিষ্কের অবস্থা বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে। এমনকি এটি নিউরোলজিক্যাল রোগ শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হতে পারে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×