ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

আপনার ফোনের ক্যামেরা আসলেই বন্ধ আছে তো?

প্রকাশিত: ১৪:১৬, ২৬ জুলাই ২০২৫

আপনার ফোনের ক্যামেরা আসলেই বন্ধ আছে তো?

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানান কাজে ফোন ব্যবহার করি যোগাযোগ, ছবি তোলা, ভিডিও দেখা, অনলাইন কেনাকাটা, এমনকি ব্যাংকিংও। এসব কাজে ফোনের ক্যামেরারও ভূমিকা রয়েছে। তবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনি যখন ক্যামেরা ব্যবহার করছেন না, তখনও এটি আপনার অজান্তে সচল থাকতে পারে? আপনি হয়তো মনে করছেন ক্যামেরা বন্ধ, কিন্তু বাস্তবে তা নয়।

অনেকেই ভাবেন, শুধু তখনই ক্যামেরা কাজ করে, যখন নিজের ইচ্ছায় তা চালু করি। কিন্তু অনেক অ্যাপ রয়েছে, যারা ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যামেরা অ্যাকসেস করতে পারে। আপনি যখন কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করেন, তখন সেটি আপনার অনুমতি চায়—ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন ইত্যাদি ব্যবহারের জন্য। বেশিরভাগ মানুষ না ভেবে ‘Allow’ বাটনে চাপ দেন। এরপর অ্যাপটি আপনার অজান্তেই মাঝে মাঝে ক্যামেরা চালু করে রাখতে পারে।

বিশ্বের অনেক নামকরা সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা জানিয়েছেন, কিছু হ্যাকার বা ক্ষতিকর অ্যাপ গোপনে ব্যবহারকারীর ফোনের ক্যামেরা চালু করে দিতে পারে। এমনকি, আপনার সামনে ফোনটা রাখা থাকলেও আপনি বুঝতেই পারবেন না, কেউ আপনার ছবি বা ভিডিও রেকর্ড করছে। তারা পরবর্তীতে এসব ছবি বা ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার মতো কাজও করতে পারে। এই ঘটনাগুলোকে বলা হয় “স্পাই কেম অ্যাটাক” বা “ক্যামেরা হ্যাকিং”।

অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন—দুই ধরনের ফোনেই এই সমস্যা হতে পারে। যদিও আধুনিক ফোনে কিছু নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে, যেমন আইফোনে যদি ক্যামেরা ব্যবহার হয়, তাহলে উপরের দিকে সবুজ আলো দেখা যায়। কিন্তু যদি কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার এতটাই উন্নত হয় যে সেটা ওই সতর্কবার্তাগুলো এড়াতে পারে, তখন আপনি কিছুই টের পাবেন না।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রথমত, আপনি যে অ্যাপগুলো ইনস্টল করেছেন, সেগুলোর অনুমতিগুলো (Permissions) নিয়মিত চেক করুন। আপনার ক্যামেরা অ্যাকসেস করা দরকার নেই এমন অ্যাপ থেকে সেই অনুমতি তুলে দিন। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালকুলেটর অ্যাপের তো ক্যামেরার দরকার হয় না, তাহলে কেন সেটিকে অনুমতি দেবেন?

দ্বিতীয়ত, প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে শুধু বিশ্বস্ত এবং জনপ্রিয় অ্যাপ ডাউনলোড করুন। কোনো সন্দেহজনক লিঙ্ক থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা উচিত নয়। অনেক হ্যাকার ভুয়া অ্যাপ বানিয়ে সেটার মাধ্যমে আপনার ফোনে প্রবেশের চেষ্টা করে।

তৃতীয়ত, ফোনে ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, যেগুলো আপনাকে সতর্ক করবে কোনো অ্যাপ অস্বাভাবিকভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করলে। এই ধরণের সিকিউরিটি অ্যাপ অনেক সময় গোপনে চালু হওয়া ক্যামেরা বা মাইক্রোফোনকে ব্লক করে দেয়।

আরও একটি নিরাপদ উপায় হচ্ছে, আপনি চাইলে ফোনের ক্যামেরার উপরে একটি স্টিকার বা ছোট করে কাগজ লাগিয়ে রাখতে পারেন, যেমনটা অনেকে ল্যাপটপের ওয়েবক্যামের ক্ষেত্রে করে থাকেন। এতে করে হঠাৎ যদি কোনো অ্যাপ ক্যামেরা চালুও করে, সেটি কিছু দেখতে পারবে না।

সবশেষে মনে রাখতে হবে, এই ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রতিদিন আমাদের জীবনের অনেক তথ্য ফোনে রেখে দিচ্ছি। তাই প্রযুক্তির সুফল গ্রহণের পাশাপাশি এর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

আপনি এখন হয়তো বলবেন, “আমার তো লুকানোর কিছু নেই।” কিন্তু ব্যাপারটা শুধু ব্যক্তিগত তথ্য লুকানোর না। এটা নিরাপত্তা, সম্মান আর আত্মসম্মানের ব্যাপার। আজকে কেউ যদি আপনার অজান্তে ছবি তোলে বা ভিডিও করে, সেটা কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে, ভাবুন একবার।

তাই আজ থেকেই সাবধান হন। আপনার ফোনের সেটিংসে যান, দেখে নিন ক্যামেরা কারা ব্যবহার করছে। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থেকে ক্যামেরা পারমিশন তুলে ফেলুন। প্রয়োজনে ফোনে স্টিকার লাগিয়ে রাখুন ক্যামেরার ওপরে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, কিন্তু সচেতন না হলে সেটাই একদিন বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

তাই প্রশ্নটা থেকে যায়— আপনার ফোনের ক্যামেরা আসলেই বন্ধ আছে তো?

এম.কে.

আরো পড়ুন  

×