ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ২৬ জুলাই ২০২৫

সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে

ছবি: সংগৃহীত

‘সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে এক আলোচনা সভায় কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুরি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই।”

‘‘যেমন আপনি দেখুন খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে, সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। আমাদের সাধারণ মানুষ তো বুঝেই না যে, আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা(জনগন) জানে যে, একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা পাতা যাই হোক সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি কিছুটা বুঝার চেষ্টা করি… তাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে … যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য।”

‘‘এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায় তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খুঁজে সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্ন কক্ষের যে পার্লামেন্ট সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।”

‘নির্বাচন বিএনপি কেনো চায়?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন জনগন প্রতিনিধি আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে, বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেনো চাই সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না। নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করবো কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে?”

‘‘কয়েকজন ব্যাক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কী দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ সরল কথা আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।”

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে উপলক্ষে ‘ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন।

‘সংস্কার রাতারাতি হয় না’

২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমুল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘‘ এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন, যে ক‘জন লোক সংস্কার যারা করছেন তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন আর সংস্কার হয়ে গেলো সেইভাবে সংস্কার হয় না।”

‘‘সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে… ইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে যাতে করে সে ঘুষ না খায়।”

‘নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ঠিক একইভাবে আমাদের যে আমলাতন্ত্র এই আমলাতন্ত্র এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা..ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সেই বিষয়গুলো করতে হবে।”

‘‘অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া… জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।”

‘দেশে ক্রান্তিকাল চলছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজ গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা। কিছু আগে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বনাম ধন্য অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান… তার একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে।”

‘‘বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকট উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূণ্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরুপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে তাকে নিরুপন করার ব্যাপারটা। আসলে আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে সেই ক্ষতিটা পুরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠাগুলোকে ধবংস করেছে। শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধবংস করেনি। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে।”

জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দকে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিতসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্ব করেন।

অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় জিয়া পরিষদের অধ্যাপত এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ার হোসেন এনাম, রুহুল আলম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

শিহাব

×