
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত শক্তি গ-গোল লাগিয়ে নির্বাচনের আয়োজনকে ভ-ুল করার চেষ্টা করছে। এই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অভ্যুত্থানের সব শক্তি মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে না পারলে মস্তবড় সুযোগ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।
শনিবার বিকেলে ১৩টি রাজনৈতিক দল একটি জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। এদিকে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন বলে বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, পরাজিত শক্তি যখনই সুযোগ পাচ্ছে তখনই নানা রকম গ-গোল সৃষ্টি করছে। এসব করে তারা দেশের স্বাভাবিক অগ্রযাত্রাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
তিনি বলেন, ‘যখনই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি তখনই নানা ষড়যন্ত্র সামনে আসছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো ষড়যন্ত্র করেই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। কারণ ফ্যাসিবাদ প্রশ্নে সবগুলো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য স্পষ্ট।’
এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, নেজামে ইসলাম পার্টির সহসভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ জাসদের সদস্য ড. মুশতাক হোসেন, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাসদ- মার্কসবাদী সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
কয়েকদিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ॥ বৈঠক শেষে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার যমুনার সামনে ব্রিফিংকালে বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করতে চাই- প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের একটা সুনির্দিষ্ট সময়সীমা, তারিখ তিনি (মুহাম্মদ ইউনূস) ঘোষণা করবেন।
এর চাইতে আনন্দের বার্তা আর কিছু হতে পারে না। আজকের মূল বিষয় হচ্ছে এইটা। আজকে দেশব্যাপী যে সমস্যা, নৈরাজ্যের সমাধান করবে নির্বাচন। এর সমাধানের একমাত্র পথ নির্বাচন, এটা তিনি (প্রধান উপদেষ্টা), তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট করেছেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন।’
বাংলাদেশের লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলাসহ সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আভাস দিয়েছেন। লেবার পার্টি মনে করে, এতে অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
ডা. ইরান অভিযোগ করেন, দেশের পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে। এতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের দরকার নেই। এই মুহূর্তে তা ফিলিস্তিনে দরকার। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চরম ব্যর্থ। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় এখনো নিহত ও আহতদের তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি। বাংলাদেশ জাসদ ফ্যাসিবাদের দোসর। রাষ্ট্রীয় কোনো বৈঠকে তাদের ডাকা উচিত নয়।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে দেশের অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি নিষ্ক্রিয় উপদেষ্টাদের সরিয়ে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবি জানান। এছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর ডিসি-এসপিদেরও অপসারণ চান তিনি।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ ঘোষণার পর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বর্তমান সংকটের নেপথ্যে বিগত দিনের ফ্যাসিবাদী শক্তিকে দায়ী করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগী হিসেবে কামনা করেন। আমরা ৮ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছি।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জানান, বৈঠকে প্রথমে মাইলস্টোনের ঘটনায় সমবেদনা জানানো হয়। এরপর সবাই একসঙ্গে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। যেন পরাজিত শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে। তাদের পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী অভিযোগ করেন, দলগুলোকে আমন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল। আর গোপালগঞ্জের ঘটনায় দূরদর্শিতার অভাব ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি কোনো উত্তর দেননি। এর আগে দুই দফায় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হেফাজত নেতাদের সাক্ষাৎ ॥ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং এই ঘটনার যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
হেফাজত ইসলামের সমাবেশে হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনা হয়।
প্যানেল হু