
দগ্ধ আরও দুই জনের মৃত্যু
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী, আরেকজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী। নিহত দুজন হলো- শিক্ষার্থী জারিফ ফারহান (১৩) ও কর্মচারী মাসুমা বেগম (৩৬)। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যান তারা।
এ নিয়ে এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ জনে। আর চারটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৬ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন। অন্যদিকে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শনিবার দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে মারা যায় জারিফ। নিহত জারিফের বাবা মো. হাবিবুর রহমান জানান, মাইলস্টোন স্কুলের ৭ম শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনে পড়ত জারিফ। তাদের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার শ্রীপুর এলাকাতে। তার ২ ছেলে-মেয়ের মধ্যে জারিফ ছিল ছোট। পরিবার নিয়ে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর, ৫ নম্বর রোডে থাকেন। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তার মৃত্যুর বিষয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, জারিফের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। ক্রিটিকাল অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। আইসিইউ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এর ঠিক ঘণ্টা খানেক পর মারা যান দগ্ধ মাসুমা বেগম (৩৬)। মৃত মাসুমার স্বামী গাড়িচালক মো. সেলিম জানান, মাইলস্টোন স্কুলের কর্মচারী ছিলেন তার স্ত্রী। তাদের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়।
এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তুরাগ নয়ানগর শুক্রভাঙ্গা এলাকায় থাকতেন। সেলিম বলেন, দুজনের আয়ে সংসার চলত তাদের। তার ছোট দুই সন্তানকে এখন কে দেখে রাখবে, লালন পালন করবে। আমার সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। এসব বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন সেলিম।
মাসুমার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল জানিয়ে ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, তার শ্বাসনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাকেও আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ॥ বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ নাসির উদ্দিন। শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
তিনি জানান, একই সঙ্গে এ ঘটনায় দগ্ধ রাফসি (১২) ও আয়ান খান (১২) নামের দুই শিক্ষার্থীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, এখনো জাতীয় বার্নে ৩৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।
তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজন। তাদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সিবিআর ক্যাটাগরিতে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি। আগামী এক সপ্তাহে আরও ১০ জনকে পর্যায়ক্রমে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ভর্তি ৪৬ জন ॥ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনো চারটি হাসপাতালে ৪৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে ৩৬ জন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (ঢাকা) ৮ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর সবশেষ বার্ন ইনস্টিটিউটে জারিফ ফারহান ও মাসুদা বেগমসহ এ ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৮ জনে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।
প্যানেল হু