
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ হারুনুর রশিদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত আসামিকে ইন্টারপোলের রেড এলার্টের ভিত্তিতে দুবাই পুলিশ গ্রেফতার করে এবং গ্রেফতারকৃত আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত আনার জন্য বার্তা প্রেরণ করে। বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম দুবাই গিয়ে আসামিকে দেশে নিয়ে আসে এবং পিবিআই নরসিংদী জেলা উক্ত আসামিকে আদালতে সোপর্দ করে। গ্রেফতারকৃত আসামির নাম মহসীন মিয়া।
গত ২০ জুলাই, দুপুর ১২:৩০ ঘটিকায় আসামিকে পিবিআই নরসিংদী জেলায় হাজির করা হয়।
২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি হারুনুর রশিদ খান নিজ বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ৩১ মে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনায় তার ছেলে বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ভিকটিম বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ হারুনুর রশিদ খান নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তদন্তে উঠে আসে, বিদেশ থেকে ফোন করে ১নং আসামি আরিফ সরকার জানান, মহসীন মিয়া তার কাছে মসজিদের অনুদান পৌঁছে দেবে। পরদিন সকালে মহসীন মিয়া মোটরসাইকেলে করে দুটি পিণ্ডল ও দুইজন শুটার নিয়ে ভিকটিমের বাসায় যান। ভিকটিম নিজ হাতে দরজা খুলে তাদের ড্রয়িং রুমে বসতে বলেন। কথা বলার একপর্যায়ে শুটাররা ভিকটিমকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে তারা আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করে।
ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; শরীর থেকে দুটি বুলেট অপসারণ করা হয়। দেশে ও বিদেশে চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় পরবর্তীতে তিনি মারা যান। ভিকটিমের ছেলে বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় মামলা (নং-১৭) দায়ের করেন।
এ ঘটনায় শিবপুর থানা পুলিশ ড্রাইভার নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে এবং তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে। এরপর আসামি ফরহাদ হোসেন ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানার একটি মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের ছেলের আবেদনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই, নরসিংদী মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মন্তোষ চন্দ্র দাস আসামি জহিরুল ইসলাম শরীফ মোল্লাকে গ্রেফতার করেন এবং তার জবানবন্দিতে উঠে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন আরিফ সরকার।
পিবিআই নিশ্চিত হয় যে, এজাহারনামীয় আসামিরা—আরিফ সরকার, মহসীন মিয়া ও হুমায়ুন—সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। এরপর ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয় এবং দুবাই পুলিশ মহসীন মিয়াকে ২১ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার করে।
বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম ১৫ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে দুবাই গিয়ে ২০ জুলাই দুপুরে মহসীন মিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনে এবং ২১ জুলাই আদালতে সোপর্দ করে। সেখানে মহসীন মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেন।
পিবিআই নরসিংদী জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি) এস.এম. মোস্তাইন হোসেন বিপিএম (বার) বলেন, “দীর্ঘ প্রচেষ্টায় আমরা মহসীন মিয়ার অবস্থান শনাক্ত করি এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।”
সানজানা