ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান বি ধ্ব স্তের শেষ ৩০ সেকেন্ড, ইজেক্ট কমান্ডের পরও কেন বাঁ চ তে পারলেন না তৌকির!

প্রকাশিত: ০০:২৭, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:২৮, ২৬ জুলাই ২০২৫

বিমান বি ধ্ব স্তের শেষ ৩০ সেকেন্ড, ইজেক্ট কমান্ডের পরও কেন বাঁ চ তে পারলেন না তৌকির!

ছবি: সংগৃহীত


২১ জুলাই সকালটা ছিল একেবারেই সাধারণ। অন্যান্য দিনের মতোই সূর্য উঠেছিল, আকাশও ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সকালেই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনা—বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তরুণ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির হারালেন তার প্রাণ। এটি ছিল তার প্রথম মিশন—মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটি সাধারণ রুটিন ট্রেনিং মিশন। কোনো যুদ্ধ, কোনো সিমুলেশন নয়, শুধুই প্রশিক্ষণ।

 

 

 

তৌকিরের এই ছোট্ট মিশনের সময় রেডিও হাতে তার কমান্ডিং অফিসার দাঁড়িয়েছিলেন পাশে। চোখ রাখছিলেন আকাশে থাকা তাঁর ছাত্রের প্রতিটি মুভমেন্টে। শুরুতে সব ঠিকঠাকই চলছিল। তৌকির একে একে দুই-তিনটি সফল গ্রাউন্ড পাস দেন। কিন্তু হঠাৎই নজরে পড়ে প্লেনটি হাইট হারাতে শুরু করেছে। যেখানে সোজা রানওয়ে বরাবর নামার কথা, সেখানে দেখা যাচ্ছিল—বিমানটি ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছে।

 

এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং কমান্ডার রেডিওর মাধ্যমে তৌকিরকে সতর্ক করেন—“চেক ইউর হাইট! চেক ইউর হাইট!” উত্তরে রেডিওতে ভেসে আসে তৌকিরের সংক্ষিপ্ত শব্দ: “রজার।” অর্থাৎ তিনি বার্তাটি পেয়েছেন এবং বুঝেছেন।

কিন্তু তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। হাইট আরও কমতে থাকে। তখন কমান্ডার শেষ চিৎকারে বলেন, “ইজেক্ট! ইজেক্ট!” কিন্তু এবার আর কোনো উত্তর আসেনি। তৌকির নীরব।

 

 

 

সিনেমায় আমরা দেখি, ইজেকশনের পর পাইলট নিরাপদে প্যারাসুটে ভেসে বেড়ান। কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি কঠিন ও নির্মম। ইজেকশন সিস্টেম মাত্র ৩ সেকেন্ডের মধ্যে চালু হয়। আসনটি একটি ছোট রকেটের মাধ্যমে প্রায় ২০০–২৫০ ফুট ওপরে ছোড়া হয়। এই পুরো সময়টাতে পাইলটের শরীরে পড়ে ভয়াবহ চাপ—১৪ থেকে ১৬ জি ফোর্স। যা একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। অনেক সময় এতে পাইলটের মেরুদণ্ড ভেঙে যায়, পাইলট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আর যদি বিমানটি অনেক নিচুতে থাকে কিংবা পাইলট আঘাতপ্রাপ্ত হন, তাহলে ইজেক্ট করেও প্রাণে বাঁচা সম্ভব হয় না।

 

 

 

সিসিটিভি ফুটেজ বলছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে ইজেক্ট করেছিলেন তৌকির। হয়তো তার ভেতরে তখন চলছিল জীবন ও মৃত্যুর যুদ্ধ। হয়তো তিনি উত্তর দেওয়ার সময় পাননি, হয়তো প্লেনটাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে চেয়েছিলেন বলেই সময় নষ্ট করেছেন। অথবা ইজেক্টের সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

শেষবার রেডিওতে ভেসে এসেছিল একটি শব্দ—“ইজেক্ট! ইজেক্ট!” তারপরই চারদিকে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। তৌকিরের যাত্রা শেষ হয় সেদিন আকাশ থেকে মাটিতে নেমে। একটি অনভিজ্ঞ প্রাণ হারিয়ে যায়, সঙ্গে রেখে যায় শোক, প্রশ্ন আর এক অমোচনীয় ব্যথা।

ছামিয়া

×