
ছবি সূত্র : ইউএনবি
২০২৩ সালের উপনির্বাচনে হিরো আলম যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন, তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা হাসির ঢেউ বয়ে যায়। মিডিয়া বলেছিল, এটা ‘ভাইরাল প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ’। সমালোচকরা বলেছিলেন, ‘এই লোক রাজনীতি বোঝেন না।’ কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে, মাঠের মানুষ দেখতে পেয়েছে এক ভিন্ন চিত্র।
ভোটে হেরেছেন ঠিকই, কিন্তু এলাকা ছাড়েননি। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াননি, শুধু একটু চুপ হয়ে গেছেন।
এলাকাবাসীর চোখে ‘নির্বাচনে হেরেও জয়ী’
বগুড়ার এক দোকানদার বললেন, ‘ভাই রে, উনি কিন্তু ভোটের পরও নিয়ম করে মানুষ দেখতে আসেন। কেউ বিপদে পড়লে পাশে থাকেন।’
এক নারী ভোটার বলেন, ‘হাস্যরস ছিল, কিন্তু ওনার চেষ্টাটা তো ছিলো আসল। ভোট চাইতে গিয়ে যেভাবে দরজায় দরজায় গেছেন, সেটা অনেক প্রার্থীই করে না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হিরো আলম এখনো নিয়মিত নিজ এলাকা ঘুরে বেড়ান, মানুষের বিপদে পাশে থাকেন, চুপচাপ সাহায্য করেন-কখনো চিকিৎসা খরচ, কখনো কোনো দরিদ্র শিক্ষার্থীর স্কুল ইউনিফর্ম কিনে দিয়েছেন, আবার কখনো কারো বিধবা মায়ের জন্য চাল-ডাল পাঠিয়েছেন নীরবে লোক দেখানো সাহায্য নয়, যেন দায়িত্ববোধ থেকে।
ঢাকায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ‘আলম থেমে নেই, কিন্তু কৌশল পাল্টেছে’।
রাজনীতিতে অনেকেই হেরে গিয়েই গুম হয়ে যান।
কিন্তু হিরো আলম একা নন-তিনি এখন এমন এক ধরনের ‘নির্বাচনী প্রস্তুতি’র মধ্যে আছেন যা প্রচারহীন, কিন্তু প্রভাবপূর্ণ।
একজন ঘনিষ্ঠ সূত্র জানান, ‘আলম ভাই বুঝে গেছেন, এখন শুধু ফেসবুক লাইভ বা পোস্ট দিয়ে হবে না। মানুষ পাশে থাকতে চায় এমন কাউকে, যিনি আসলে কাজ করেন। তাই উনি এখন দেখানোর চেয়ে করার দিকেই বেশি আছেন।’
কিছু বাস্তব উদ্যোগ চোখে পড়ছে। যেমন, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন, স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম স্পন্সর, স্কুলে পড়ুয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সহায়তা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে আলাপচারিতা, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিতি, কিন্তু কোনও রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়াই এই উদ্যোগগুলো তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
প্রশ্ন উঠছে-এইবার কি ভিনি দলীয় প্ল্যাটফর্মে যাবেন?
২০২৩ সালের নির্বাচনে হিরো আলম কোনো বড় দলের টিকিটে দাঁড়াননি। তবে এখন কিছু আভাস পাওয়া যাচ্ছে—তিনি নাকি একটি ছোট রাজনৈতিক দল বা নতুন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আলোচনা করছেন, যেখানে তাকে শুধু মুখ হিসেবে নয়, দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবেও নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে এখনও সরাসরি কোনো ঘোষণা আসেনি।
সাধারণ মানুষের কণ্ঠে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলেন, ‘ওনার মতো সাহসী দরকার আমাদের রাজনীতিতে। ভুল করলেও এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা আছে।’ আবার কেউ বলেন, ‘রাজনীতি অনেক গভীর ব্যাপার। ভাইরাল হবার মতো না।’
কিন্তু এই দুই মেরুর মাঝেও একটা কথা এক হয়ে যায়—হিরো আলমকে কেউ আর অবহেলা করে দেখে না। সে একটা প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিরো আলম রাজনীতিতে ফিরবেন কি না, সেটা সময় বলবে। কিন্তু এখন যা স্পষ্ট, তা হলো—তিনি চলে যাননি। থেমেও যাননি। বরং রাজনীতি না করেও তিনি রাজনীতির সবচেয়ে জরুরি কাজটাই করে যাচ্ছেন—মানুষের পাশে থাকা।
Mily