ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঢাকার বেশিরভাগ স্কুলেই অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার উপযোগী ব্যবস্থা নেই: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি নিরাপদ?

এলেন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ১১:৪১, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৪১, ২৬ জুলাই ২০২৫

ঢাকার বেশিরভাগ স্কুলেই অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলার উপযোগী ব্যবস্থা নেই: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি নিরাপদ?

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকার অধিকাংশ স্কুলেই আজও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি মোকাবিলার মতো মৌলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এই ভয়াবহ সত্যটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিদ্যালয় মানেই শিক্ষার আলো, কিন্তু সেই আলো যদি আগুনের হলকা হয়ে ওঠে, তবে দায় কার?

অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার থাকলেও তা বহু বছর ধরে পরীক্ষিত নয়, কোথাও আবার দেয়ালে ঝোলানো থাকলেও ব্যবহার জানে না কেউ। বহুতল ভবনে চলা স্কুলগুলোতে নেই ফায়ার এক্সিট, নেই নিয়মিত ফায়ার ড্রিল, শিক্ষার্থীদের মাঝে নেই প্রশিক্ষণ। অথচ স্কুলে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারী অবস্থান করে। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণহানির শঙ্কা ভয়াবহ হতে পারে।

এই উদাসীনতার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ—অবকাঠামো গড়ার সময় অগ্নি-নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দেওয়া, স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব এবং প্রশাসনের নজরদারির ঘাটতি।

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রাণ হারিয়েছে একাধিক নিষ্পাপ শিশু, দগ্ধ হয়েছে অনেকেই। এই ভয়াবহ ঘটনা শুধু বিমান চলাচল ব্যবস্থারই নয়, বরং আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরুরি নিরাপত্তা ও অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের প্রস্তুতির ঘাটতিও নগ্ন করে তুলে ধরেছে।

বিমান দুর্ঘটনার পর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আগুন। শিক্ষার্থীরা জানে না কীভাবে নিরাপদে বের হতে হয়। অনেক কক্ষে ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে, কেউ জানালা ভাঙতে পারেনি, কেউ বেরিয়ে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যায়। এই পরিস্থিতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্কুলগুলোতে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা কতটা অপ্রস্তুত।

ঢাকার অধিকাংশ স্কুলেই আজও ফায়ার ড্রিল হয় না, ইমার্জেন্সি এক্সিট নেই, ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার থাকলেও তা অকেজো, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ নেই। যদি উত্তরার এই দুর্ঘটনার আগেও প্রতিটি স্কুল নিয়ম করে মহড়া চালাতো, যদি জানত ছাত্রছাত্রীরা কোন পথে বের হতে হবে—তবে হয়তো এত প্রাণহানি হতো না।

এই ঘটনায় একটি স্পষ্ট বার্তা আছে—শুধু দুর্ঘটনার পরে কান্না করলে হবে না, পূর্বপ্রস্তুতিই হতে হবে সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা।
সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড এবং ফায়ার সার্ভিস—all stakeholders—কে এখনই স্কুলগুলোর জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে মনিটর করতে হবে।

স্কুল মানেই শুধু পাঠদানের কেন্দ্র নয়, এটা শিশুদের দ্বিতীয় ঘর। সেই ঘর যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে শিক্ষার কোন মানে থাকে?

আমরা চাই না আর একটি মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি। আমরা চাই না চোখের সামনে আমাদের সন্তানদের পুড়ে যেতে। তাই এখনই সময় ব্যবস্থা নেওয়ার, এখনই সময় প্রতিটি স্কুলে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক ও কার্যকর করার।

লেখক: এলেন বিশ্বাস, উত্তরা, ঢাকা
 

নোভা

×