ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ২৫ জুলাই ২০২৫

ইরানের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গত ১৩ জুন ইসরাইলি বাহিনী ইরানে সামরিক, পারমাণবিক ও আবাসিক এলাকায় আগ্রাসন চালায়। ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি এই আগ্রাসনে যুক্ত হয়ে ইরানের নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এ হামলার পাল্টা জবাবে ইরান ইসরাইলের দখলকৃত ভূখণ্ডজুড়ে ২২ দফা পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কাতারের আর-উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
গত ২১ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান থেকে বাংকার বাস্টার বোমা হামলা চালায়। এরপর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে আসছেন, ইরানের পরামাণবিক স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ হামলাকে ঐতিহাসিকভাবে সফল বলে উল্লেখ করেন। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদানগুলোকে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে। কয়েক মাসের জন্য কেবল কর্মসূচি পিছিয়েছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসিও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলায় একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ইরান সম্ভবত কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারবে। তবে গত ২ জুলাই মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শন পার্নেল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে চালানো হামলাকে সাহসী অভিযান উল্লেখ করে তিনি প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অন্তত এক থেকে দুই বছর পেছাতে সক্ষম হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের এই হামলা কিন্তু ইরানের জনগণকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উসকে দিতে পারেনি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিন্তু এমন ফলাফলই প্রত্যাশা করেছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও বলেছিলেন, এই সরকার যদি ইরানকে আবার মহান করতে না পারে, তবে সরকার পরিবর্তনই সঠিক সমাধান। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ১৭তম ব্রিকস সম্মেলনের প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিকসের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইরানের ওপর সাম্প্রতিক মার্কিন ও ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এসব হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ব্রিকস সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে বলেন, ইসরাইলকে যদি ইরানে হামলার জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা না হয় তবে পুরো অঞ্চল এবং তার বাইরেও এর পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ২২৩১-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০১৫ সালে ওই প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমোদন প্রদান করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র পরে যে হামলা চালিয়েছিল, তাতে ইসরাইলের ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধে মার্কিন সরকারের সম্পূর্ণ জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
উল্লেখ্য, ছয় বিশ^ শক্তি (ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ২০১৫ সালে ইরান জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করতে এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। চুক্তির শর্তানুযায়ী, ইরান সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত। ১৫ বছর ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে কোনো কার্যক্রম চালানো নিষিদ্ধ ছিল। এই চুক্তির বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পশ্চিমা দেশগুলো সম্মত হয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তিটি নবায়নের জন্য চেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে ইরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির চেষ্টা শুরু করেন। ওমান ও ইতালিতে রাষ্ট্র দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়। ওমানে ষষ্ঠ দফা বৈঠক হওয়ার দুই দিন পূর্বে ইসরাইল হামলা চালায় ইরানে। এখানে উল্লেখ্য যে, ইরানে পারমাণবিক শক্তির বিষয়টি এসেছে পশ্চিমাদের হাত ধরেই। ‘অ্যাটম ফর পিস’ কর্মসূচির মাধ্যমে ব্রিটিশ ও আমেরিকানরাই ইরানে পারমাণবিক প্রযুক্তি নিয়ে আসে। শাহের আমলে ইরান ২৩টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর খোমেনি এসব কর্মসূচিকে পশ্চিমা বিলাসিতা অভিহিত করে বাতিল করেন। তবে বিদ্যুৎ সংকট ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপে ইরান সরকার গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করে গোপনে। ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক মহলে ইরানের কণ্ঠরোধ এবং অসসম্পূর্ণ প্রকল্প নিয়ে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ মামলা- এসব কিছু মিলিয়েই ইরানে পারমাণবিক জাতীয়তাবাদ তৈরি হয়। ১৯৯০ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা প্রদান করে যে, ২০০৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি থেকে দেশের ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রফসানজানি ইরানি বিজ্ঞানীদের দেশে ফিরে এসে পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিতে আহ্বান জানান। পারমাণবিক শক্তি তখন দেশপ্রেমের প্রতীক রূপ ধারণ করে। ২০০৩ সালে তেহরান ঘোষণা ও ২০০৪ সালের প্রারিস চুক্তিতে ইরান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ অস্থায়ীভাবে স্থগিত করে। কিন্তু ২০০৫ সালে মাহমুদ আহমাদিনেজাদ নির্বাচিত হলে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা করেন, পারমাণবিক প্রযুক্তি ইরানি যুবকদের বৈজ্ঞানিক সাফল্য। জাতিসংঘের পরিদর্শক মোহাম্মদ এলবারেদি বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্মান ও আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠার এক মাধ্যম। 
ইরানের উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি বলেছেন, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পক্ষে একচোখা অবস্থান নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হামলার পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল না করলে ইরান কোনো আলোচনা শুরু করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার কোনো হামলা চালায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্য হবে। ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম সাফাভি বলেছেন, শত্রুর যেকোনো পরিকল্পনার জবাব দিতে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। আর ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইব্রাহিম জাব্বারি জানিয়েছেন, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতির শীর্ষে রয়েছে। আর-জাজিরার বিশ্লেষক গ্যাটোপুলোস বলেছেন, ইরানের হাতে এখন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে; যা ক্রমাগত উন্নত ও পরিণত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থারই প্রত্যক্ষ ফলাফল। এদিকে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে গত সপ্তাহে ইরানের পার্লামেন্টে পস হওয়া বিলে গত ২ জুলাই দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আইএইএর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ইরান সহযোগিতার সম্পর্ক স্থগিত করেছে। ইরানের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক সংস্থাটি পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ইসরাইলের বিমান হামলার পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আইএইএর যে কোনো পরিদর্শনের জন্য তেহরানের সর্বোচ্চ জাতীয় পরিষদের অনুমোদন লাগবে। ইরানের সর্বোচ্চ পরিষদ ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’-এর মুখপাত্র তাহান নাজিফ বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার পূর্ণ সম্মান রক্ষার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ান সা’র ইরানের এমন সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। এটি তাদের সব আন্তর্জাতিক পারমাণবিক বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্রুতি থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে আসার শামিল বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া এবং ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা রুখতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পর ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের জন্য ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী জার্মানি, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য এই তিনটি ইউরোপী রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোকে স্ন্যাপব্যাক ব্যবস্থাটি এই ক্ষমতা প্রদান করে যে, ইরান যদি চুক্তির কোনো শর্ত লঙ্ঘন করে, তবে তারা ইরানের ওপর জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করতে পারবে। 
ইসরাইলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেও ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচিতে সহায়তা করে আসছে; যা উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাশিয়া ও ইরান একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেখানে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উল্লেখ রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, আয়াতুল্লাহ খামেনি একাধিকবার স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি, সংরক্ষণ বা ব্যবহারকে নৈতিক ও ধর্মীয় কারণে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই মর্মে তিনি একটি ধর্মীয় ফতোয়াও জারি করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বিশেষ করে ইসরাইল, দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। যদিও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে গভীর তদন্ত সত্ত্বেও এ ধরনের কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। ইসরাইলের এমই হামলার কোনো বৈধতা নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বহীন বোমাবর্ষণ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর হামলার নজির স্থাপন করেছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার জেরে আইএইএর সঙ্গে তেহরানের সম্পর্ক খারাপ হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সংস্থাটিকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্পগুলো নিয়ে আইএইএ কাজ করতে চাইলে তাদের দ্বিমুখী নীতি ত্যাগ করতে হবে। 
ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পরিদর্শনে সম্মতি দেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণও বন্ধ করেনি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানকে তিনি কোনোভাবেই পরমাণু কর্মসূচি আবার শুরু করতে দেবেন না। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিতের পর ইরান আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আইএইএর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা বিপজ্জনক বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই সুযোগে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিতে পারে বলে ধারণা করছেন। ইরানের এমন সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রহণযোগ্য বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ইরানের সামনে এখনো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার সুযোগ আছে। কিন্তু তারা উল্টো পথে হাঁটছে। আইএইএর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা ছাড়া ইরানের নিকট বিকল্প কোনো পথ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেনে। ইরান যাতে আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরুর চেষ্টা করতে না পারে সেজন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতায় নেমেছেন। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সাক্ষাতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিকট থেকে আগাম অনুমতি পাওয়া। যেন সন্দেহজনক কোনো পারমাণবিক তৎপরতা দেখা দিলেই ইসরাইল ইরানে দ্রুত হামলা চালাতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইরান যদি বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালাতে চায়, তারা সেটা চালাতে পারে। বিশে^র অনেক দেশ তেমনটা চালায়। এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আমদানি করলেই হয়। কিন্তু তারা যদি নিজেরাই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে অনড় থাকে, তাহলে তারা হবে বিশে^র একমাত্র দেশ, যাদের কোনো অস্ত্র কর্মসূচি নেই, কিন্তু নিজেরাই সমৃদ্ধকরণ করছে- যা সত্যিই সমস্যার। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরও তেহরানের নিকট কিছু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে বলে ইসরাইল ধারণা করছে। ইসরাইল আশঙ্কা করছে, এসব ইউরেনিয়াম পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। ইরানে আবার হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এবার হামলায় আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যদি আবারও আগ্রাসন চালানো হয়, ইরান তার জবাব আরও দৃঢ়ভাবে দেবে ইরান। এমন পরিস্থিতিতে ইরান ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের পুনরায় সংঘাতে জড়ানোর সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্যানেল/মো.

×