ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

মেয়েদের PCOS সমস্যা, খেয়াল না করলে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব!

প্রকাশিত: ১১:১৬, ২৬ জুলাই ২০২৫

মেয়েদের PCOS সমস্যা, খেয়াল না করলে হতে পারে বন্ধ্যাত্ব!

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে মেয়েদের মধ্যে একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে PCOS বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। অনেক মেয়েই এই সমস্যায় ভুগলেও অনেক সময় তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। ফলে ভবিষ্যতে জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বন্ধ্যাত্ব। সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

PCOS একটি হরমোনজনিত সমস্যা। এতে মেয়েদের শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে ওভারিতে ছোট ছোট সিস্ট বা গুটির মতো গঠন হয়। এই সিস্টগুলো সাধারণত ক্ষতিকর না হলেও ওভুলেশন বা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণ প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। ফলে নিয়মিত মাসিক না হওয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এই সমস্যার অন্যতম লক্ষণ হলো অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত লোম গজানো (বিশেষ করে মুখ, বুকে বা পেটে), ব্রণ, ওজন বেড়ে যাওয়া, মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক মেয়েই ভাবেন এগুলো সাধারণ সমস্যা, কিন্তু নিয়মিত এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

PCOS-এর সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো এটি মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। যেহেতু ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না, তাই গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় মাসের পর মাস ওভুলেশন না হওয়ায় ডিম্বাণু তৈরি হয় না, ফলে গর্ভধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই যেসব দম্পতি সন্তান নিতে চাইছেন, অথচ দীর্ঘদিনেও গর্ভধারণ হচ্ছে না, তাদের উচিত এই সমস্যা পরীক্ষা করে দেখা।

এছাড়াও, PCOS থেকে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, চর্বিযুক্ত লিভার (fatty liver) এবং হরমোনজনিত ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই শুধু সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, মেয়েদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এই সমস্যার প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি।

PCOS মূলত একটি জীবনযাপন-নির্ভর রোগ। অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, কম শারীরিক পরিশ্রম—এসব এর অন্যতম কারণ। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা, সময়মতো ঘুমানো ও জেগে ওঠা, সুষম খাবার খাওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চিকিৎসার জন্য প্রথমেই হরমোন পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স পরীক্ষা করা হয়। এরপর রোগীর অবস্থা অনুযায়ী ওষুধ ও লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্টের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করে হরমোন ব্যালেন্স করা হয়। আবার যাদের সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা আছে, তাদের জন্য ওভুলেশন বৃদ্ধিকারী ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

PCOS পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে নিয়মিত চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। অনেকেই সন্তান জন্মের পর এই সমস্যা কমে যেতে পারে, তবে তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই দেরি না করে উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

PCOS কোনো লজ্জার বিষয় নয়, বরং সচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি সুস্থ জীবন ও মাতৃত্ব— দুটোই সম্ভব। নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হোন, নিয়মিত পরীক্ষা করান এবং স্বাস্থ্যবান থাকুন। PCOS থাকলেও আপনি একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, এবং আপনি মা হতে পারেন— শুধু প্রয়োজন সচেতনতা, ধৈর্য ও সময়মতো চিকিৎসা।

এম.কে.

×