
ছবিঃ সংগৃহীত
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপের প্রভাবে মেঘনা নদী উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এক থেকে দুই ফুট অধিক উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।
নদী উত্তাল থাকায় নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। নদীতে মাছ ধরার নৌকাগুলো নদীর পারে ভিড়তে শুরু করেছে।
তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেওয়ার পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বিভিন্ন ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখার আদেশ দেন।
এরপর থেকে হাতিয়ার নলচিরা-চেয়ারম্যান ঘাট নৌপথে চলাচলকারী সি-ট্রাক ও বেসরকারি বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ঢাকা-হাতিয়া রুটে যাত্রীবাহী লাইটার জাহাজ চলাচলও বন্ধ রয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম-হাতিয়া রুটে জেলা সদরসহ অন্যান্য স্থান থেকে চলাচলকারী সরকারি জাহাজগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। অসংখ্য লাইটার জাহাজ তীরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সব ধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত যাত্রী পারাপার একেবারে বন্ধ থাকবে। এছাড়া নদীতে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দ্বীপের বেশির ভাগ এলাকা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বহু ঘরবাড়ি, সড়ক ও খামার পানিতে ডুবে গেছে। অনেক পুকুর ও মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। তবে এখনো বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বীপে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে হঠাৎ করে নামার বাজার (শতফুল), বন্দরটিলা, চর আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় চলাচলের প্রধান সড়কগুলো। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
নামার বাজার এলাকার বাসিন্দা হোসনেয়ারা রান্নার সময়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘রান্নাঘরের মাটির চুলায় ভাত বসিয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি পানিতে চুলা ডুবে যাচ্ছে। কোনোরকমে ভাত হয়ে গেল, তরকারি আর রান্না করতে পারিনি। পরে ইট তুলে চুলা বানিয়ে রান্না শেষ করেছি। আশপাশের অনেকেই পানির কারণে রান্না করতে পারেননি।’
নামার বাজারের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপের সবচেয়ে উঁচু বাজার হিসেবে পরিচিত নামার বাজারও এবার তলিয়ে গেছে। বেলা একটার পর থেকেই বাজার ও আশপাশের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে।’
বাজারের অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা জানান, হঠাৎ করে পানি বেড়ে যায়। দ্বীপের বহু পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লাভলী বেগম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘চলাচলের প্রধান সড়কসহ প্রায় পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।’
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
সাগরে নিম্নচাপের কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কটি সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। একই অবস্থা হয় উপজেলার নলচিরা, সোনাদিয়া ও সুখচর ইউনিয়নে।
দ্বীপের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানান, জোয়ারে নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাজারের ওপরের রাস্তাটি দুই ফুট উচ্চতার পানিতে তলিয়ে যায়। মানুষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এলাকার অনেক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
প্রধান সড়কের ওপর পানি ওঠায় প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল নামার বাজার থেকে বন্দরটিলা বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা। নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে সহজেই প্লাবিত হয় চারপাশ। এদিকে উপজেলার নলচিরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরে তুফানিয়া গ্রামটি অনেকটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইউনুছ জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে তুফানিয়া গ্রামের প্রতিটি ঘরবাড়ি ও এবাদতখানা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকে বেড়িবাঁধের ওপরে দাঁড়িয়ে সময় কাটিয়েছেন। পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়িঘরে ফিরছেন মানুষ।
একই অবস্থা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ঢালচর ও চরগাসিয়ায়। এই দুটি চরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করে। বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে সহজেই তলিয়ে যায় লোকালয়।
চরগাসিয়া জনতা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, চরের মাঠঘাট সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চরের অধিকাংশ মানুষ সরকারি আশ্রয়ণকেন্দ্রে অবস্থান করছে। আবার জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়িঘরে ফিরে গেছেন।
জানতে চাইলে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে নিঝুম দ্বীপসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মানুষ বিপদে রয়েছে। আমরা আমাদের মতো করে খোঁজখবর নিচ্ছি। প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা পাঠানো হবে।’
ইমরান