
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের শহর ও গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বেঙ্গালুরুর একটি স্টার্টআপ ‘ওয়েস্ট ইজ গোল্ড’ (Waste Is Gold) উদ্ভাবন করেছে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রযুক্তি, যা মাত্র ৮ ঘণ্টায় জৈব বর্জ্যকে পুষ্টিসমৃদ্ধ কম্পোস্টে রূপান্তর করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ভারতের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক বিপ্লব আনতে সক্ষম। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে বছরে ৬২ মিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে মাত্র ২২-২৮ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত হয় এবং বাকিগুলো জমা হয় ল্যান্ডফিলে। এর অর্ধেকের বেশি অংশই জৈব বর্জ্য, যা কম্পোস্ট হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।
স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা সন্দীপ তিওয়ারি জানান, তাদের তৈরি ‘গোল্ড কম্পোস্টার’ যন্ত্রটি ২০ কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ টন পর্যন্ত জৈব বর্জ্য মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যে কম্পোস্টে রূপান্তর করতে পারে। এটি একটি উন্নত অ্যারোবিক বায়োরিয়্যাক্টর, যা নিজস্বভাবে তৈরি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে কাজ করে। যন্ত্রটি তাপমাত্রা, অক্সিজেন ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত কম্পোস্ট প্রস্তুত করে। এতে কোনো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয় না, ফলে এটি পরিবেশবান্ধব এবং কম কার্বন নিঃসরণকারী প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই মেশিন রান্না করা খাবারের উচ্ছিষ্ট, তরল জৈব বর্জ্য, মাংস, হাড়, মাছের কাটা, ডিমের খোসা, নারকেলের মালা, ঘাস, পাতা, টিস্যু ও স্টিপ স্লাজ থেকে কম্পোস্ট তৈরি করতে সক্ষম। প্রস্তুতকৃত কম্পোস্ট একই দিনেই বাগান বা ল্যান্ডস্কেপিংয়ে ব্যবহার করা যায়, আর কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ৩-৭ দিন পরিপক্ব হতে দেওয়া হয়।
এই প্রযুক্তি ভারতের ২০১৬ সালের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে যে বাল্ক বর্জ্য উৎপাদকদের নিজেদের বর্জ্য নিজেরাই প্রক্রিয়া করতে হবে। ‘ওয়েস্ট ইজ গোল্ড’ ঠিক সেটিই করছে। তাদের মেশিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক প্রকল্পে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সারা ভারতে ১৫০টি স্থানে এই যন্ত্র বসানো হয়েছে এবং তা মাসে প্রায় ১২০০ টন কম্পোস্ট উৎপাদন করছে। সেন্ট্রাল ফুড টেকনোলজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (CFTRI) পর্যন্ত তাদের গবেষণার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করছে।
ব্যবহারকারীরাও সন্তুষ্ট। যেমন, বেঙ্গালুরুর প্রেস্টিজ রয়্যাল গার্ডেনস প্রতিদিন ৮০০ কেজি বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে এই মেশিনে গন্ধ বা স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াই। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘অ্যাড্রেস মেকার’ জানায়, আগের মেশিনে মিথেন গ্যাস নির্গত হতো, কিন্তু গোল্ড কম্পোস্টারে সে সমস্যা নেই। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি গৃহস্থালির জন্য পোর্টেবল কম্পোস্টার আনার পরিকল্পনা করছে, পাশাপাশি ড্রাই ওয়েস্ট ও বায়ো মাইনিং সেক্টরেও প্রবেশ করতে চায়। তারা বিনিয়োগ আহ্বান করে এই প্রযুক্তিকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
সবমিলিয়ে, ‘ওয়েস্ট ইজ গোল্ড’-এর প্রযুক্তি শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, এটি ভারতের মতো দ্রুত নগরায়নের চাপে থাকা দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক কার্যকরী ও টেকসই সমাধান হতে পারে। কম সময়ে বর্জ্য নিষ্পত্তি, খরচে সাশ্রয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য কম্পোস্ট উৎপাদন, এই সব মিলিয়ে এটি আগামী দিনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।
মুমু ২