ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

সারোগেসি কেলেঙ্কারির ভয়াবহতা: একই দম্পতির জন্য একাধিক সারোগেট

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:০০, ২৬ জুলাই ২০২৫

সারোগেসি কেলেঙ্কারির ভয়াবহতা: একই দম্পতির জন্য একাধিক সারোগেট

ছবি: সংগৃহীত

পেনসিলভানিয়ার ২৬ বছর বয়সী অ্যালেক্সা ফ্যাসোল্ড ভেবেছিলেন, তিনি এক বন্ধ্যাত্বে আক্রান্ত দম্পতির জীবনে নতুন আশার আলো আনছেন। তিনি জানুয়ারি ২০২৫ থেকে একটি পুরুষ শিশুকে গর্ভে বহন করছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই জানা যায়, তিনি যে মার্ক সারোগেসি ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি (Mark Surrogacy Investment LLC) নামক সংস্থার হয়ে এই কাজ করছেন, সেটি এক ভয়াবহ প্রতারণা ও শিশু নির্যাতন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

এই সংস্থা ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি, সিলভিয়া ঝাং (বয়স ৩৮) এবং তার স্বামী গুওজুন শুয়ান (বয়স ৬৫), চালাতেন যেটির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা ২১টি শিশুর জন্মে জড়িত ছিলেন।

এই শিশুগুলোর বেশিরভাগই জন্মেছে "সারোগেট মা" বা গর্ভ ভাড়া নেওয়া নারীদের মাধ্যমে। অর্থাৎ, শিশুগুলোর জৈবিক (বায়োলজিকাল) বাবা-মা ছিলেন ঝাং ও শুয়ান, কিন্তু গর্ভে ধারণ করতেন অন্য নারী।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, একই সময়ে একাধিক নারীকে সারোগেট মা বানানো হয়েছিল, এবং সব শিশুর জৈবিক বাবা-মা ছিলেন এই একই দম্পতি। এর মানে তারা যেন একটা "শিশু উৎপাদন ফ্যাক্টরি" চালাচ্ছিলেন।

পুলিশের সন্দেহ, এই শিশুগুলো জন্ম দেওয়ার পেছনে ছিল বিদেশে বিক্রি বা দত্তক দেওয়ার মতো উদ্দেশ্য। এখন এই ঘটনাটি তদন্তাধীন।

 

গোটা বিষয়টির সূত্রপাত ঘটে মে মাসে, যখন একটি ২ মাস বয়সী শিশুকে গুরুতর মাথার আঘাত নিয়ে হাসপাতালে আনা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে আর্কাডিয়ার ওই দম্পতির বাড়ি থেকে ১৫টি শিশু এবং পরিচিতদের বাড়ি থেকে আরও ৬টি শিশুকে উদ্ধার করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই শিশুদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এক ৫৬ বছর বয়সী ন্যানির বিরুদ্ধে এমন এক শিশুকে ঝাঁকিয়ে ও আঘাত করার দৃশ্য পাওয়া যায়, যার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হতে হয়।

এই সময়েই অ্যালেক্সা জানতে পারেন, যে সংস্থার সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ, সেটি জুন ২০২৫-এ আইনত বন্ধ হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তদন্তাধীন। তাঁর চুক্তিতে বলা ছিল, তিনি সন্তানের উপর কোনো দাবি করতে পারবেন না। কিন্তু এখন সেই শিশুটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অ্যালেক্সা নিজেই ফস্টার প্যারেন্ট হওয়ার চিন্তা করছেন।

অ্যালেক্সা ও তাঁর স্বামী প্রথমে একটি পরিচিত দম্পতির হয়ে সারোগেট হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চিকিৎসাজনিত কারণে তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এরপর ফেসবুক গ্রুপে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সেখান থেকেই Mark Surrogacy সংস্থা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। শুরু থেকেই এই সংস্থা সব শর্তে রাজি হয়, যেমন: অজ্ঞাত বাবা-মা, যোগাযোগ সীমিত রাখা এবং গর্ভাবস্থার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সারোগেটের হাতে রাখা, যা সাধারণত হয় না। 

 এখন তিনি জানেন না, শিশুটি কোথায় যাবে বা কে তাকে গ্রহণ করবে। FBI ও শিশুকল্যাণ সংস্থার সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং আইনজীবীর সহায়তা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “আমরা তো একটা পরিবার তৈরি করতে চেয়েছিলাম। এটা তো যেন হরর মুভি হয়ে গেল।” তবুও তার মনোবল অটুট। ভবিষ্যতে আবারও সারোগেট হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। তার কথায়, “সারোগেসি এখনও আমার চোখে একটি সুন্দর অভিজ্ঞতা যদিও এবার ভুল মানুষের পাল্লায় পড়েছিলাম।”

মুমু ২

আরো পড়ুন  

×