
ছবি: জনকণ্ঠ
সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) সহ দেশের প্রায় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবি উঠে আসে। এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট হাবিপ্রবি প্রশাসন ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অফিস আদেশে, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়—যা রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১-এর ৪৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদিও শিক্ষক বা কর্মকর্তার রাজনৈতিক মতামত পোষণের স্বাধীনতা সংরক্ষিত আছে, তারা তা প্রকাশ বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে পারবেন না।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে প্রশাসন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করছে, যা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শিক্ষকরা শুধু রাজনীতিই করছেন না দলীয় প্রভাব খতিয়ে প্রশাসনিক পদগুলো বণ্টন করেছে বলেও সম্প্রতি এক শিক্ষকের ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকেও জানা যায়।
হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির পরিচালিত দুই ধাপের জরিপে শিক্ষার্থীদের মতামত দৃঢ়ভাবে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের পক্ষে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে করা জরিপে ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের বিপক্ষে অবস্থান নেন। আগের বছর, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী হাকসুরের মতো নিরপেক্ষ ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের পক্ষে মত দেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, “প্রশাসন বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মত বিনিময় সভার আয়োজন করলেও রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রধান্য দেয় । আমরা তার প্রতিবাদ করলে আমাদের বাদ দিয়েই গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিটিং করে। জুলাই চেতনা নিয়ে বক্তব্য দিলেও কার্যত তাঁদের মধ্যে নূরন্যতম জুলাই চেতনা নেই ।
সদ্য প্রভাষক থেকে পদোন্নতি পাওয়া একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক ব্যানারে যুক্ত হতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা বলেন, “নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকলে প্রমোশন আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। প্রমোশনের যোগ্যতা থাকলেও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়া তা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। উপাচার্যসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
এদিকে আদেশ অমান্য করে প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের দুটি সক্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্র শিবির ও ছাত্রদলকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সহায়তা করে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন,"বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব সময় শিক্ষার্থীদের পালস বুঝে তাদের চাওয়া পাওয়ার ভিত্তি তে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাসে সকল দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি পরিবাহার করে ছাত্র সংসদ এর মাধ্যমে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের দ্বারা ক্যাম্পাস পরিচালনা হোক এটা সব সময় চায়। "
তিনি আরো বলেন, "গত বৃহস্পতিবার সকল রাজনৈতিক সংগঠন ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ওপেন করা কথা বললে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর বিরোধীতা করে মাননীয় উপাচার্য স্যার এর কাছে ছাত্র সংসদ এর রোড ম্যাপ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।"
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক লেখক অধ্যাপক ড. রউফুল আলম বলেন, "যারা বিশ্বাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বজায় রেখে উচ্চশিক্ষায় বিপ্লব ঘটাবে, তারা বস্তুত কোন না কোন দলেরই অন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দাঁড় করাতে হলে, সর্বপ্রথম এই দলীয় রাজনৈতিক চর্চা বন্ধ করতে হবে। স্টপ মানে ফুল স্টপ। ছাত্র-শিক্ষকরা যদি রাজনীতি করে বা করতে বাধ্য হয়, সেখানে জ্ঞান-গবেষণার তুমুল পরিবেশ কখোনই গড়ে উঠে না।"
শিহাব