
ছবি: সংগৃহীত
সীমান্ত সংঘর্ষে ৩০ জনের বেশি নিহত এবং দুই লাখের কাছাকাছি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ায় থাইল্যান্ডের সঙ্গে জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে কম্বোডিয়া। শনিবার জাতিসংঘে নিযুক্ত কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত চেয়া কিও বলেন, ‘আমরা শর্তহীনভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছি এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’
এদিকে থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়াম্পংসা বলেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য কম্বোডিয়াকে অবশ্যই প্রকৃত আন্তরিকতা দেখাতে হবে।’
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে দুই দেশই একে অপরকে প্রথম গুলি চালানোর অভিযোগ করছে। শনিবার পর্যন্ত সংঘর্ষ তৃতীয় দিনে গড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
নিহত ৩২, বাস্তুচ্যুত প্রায় ২ লাখ
থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ১৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৬ জন সৈনিক। দেশটিতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে ১৩ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮ জন বেসামরিক ও ৫ জন সেনা সদস্য। দেশটিতে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার কম্বোডিয়ার সেনারা দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় নতুন হামলা চালায়, তবে থাই নৌবাহিনী তাদের পিছু হটাতে সক্ষম হয়।
যুদ্ধের পথে এগোচ্ছে?
থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই শুক্রবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘পরিস্থিতি সরাসরি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।’ তিনি আরও জানান, বর্তমানে সীমান্তের ১২টি এলাকায় ভারী অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ চলছে।
থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকায় গুলি চালানোর অভিযোগ তুলেছে এবং সব গ্রামবাসীকে রকেটের আওতাধীন অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, কম্বোডিয়া দাবি করেছে, থাই বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। তবে থাইল্যান্ড এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ, মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান
বিশ্ব নেতারা যুদ্ধবিরতির জন্য জোর আহ্বান জানালেও থাইল্যান্ড বলেছে, এ সংকটে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতার প্রয়োজন নেই। আসিয়ান জোটের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশের মধ্যে আলোচনা আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ‘সহিংসতা বন্ধ এবং বেসামরিক জনগণের সুরক্ষার’ আহ্বান জানিয়েছে।
পুরনো বিরোধ, নতুন উত্তেজনা
দুই দেশের এই সীমান্ত বিরোধ এক শতাব্দীরও পুরোনো, যা ফরাসি উপনিবেশিক শাসনের সময়কার সীমানা নির্ধারণকে কেন্দ্র করে। সময়-সময় এই বিরোধ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে।
সর্বশেষ উত্তেজনা বেড়ে যায় মে মাসে, যখন একটি সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়। এরপর থেকেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুটি দেশের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন থাইল্যান্ড ও কাম্বোডিয়ার ওপর। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সূত্র: বিবিসি।
রাকিব