ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:১৫, ২৭ জুলাই ২০২৫

ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক উদ্যোগ

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর ধূমপান বিরোধী আইন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া কোনো ব্যক্তির কাছেই আর তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা যাবে না। একে ধাপে ধাপে কার্যকর করে তামাক বিক্রি বন্ধ করতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। তাদের লক্ষ্য—প্রথমবারের মতো একটি সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তোলা।

ধূমপানের পরিণতির বাস্তব উদাহরণ গ্যারি নামের একজন ভুক্তভোগী। কিশোর বয়সে ধূমপান শুরু করেছিলেন তিনি। এখন মাত্র ৪০ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়ে হার্ট বাইপাস সার্জারির অপেক্ষায় আছেন। গ্যারি জানান, তিনি একসময় ভেবেছিলেন, তার কিছু হবে না। কিন্তু আজ তার দুই চোখের দৃষ্টিশক্তিও আংশিক হারিয়ে গেছে। তিনি বলেন, “জীবনের অনেকটা সময় আমি ভেবেছিলাম আমার কিছু হবে না, আমি ঠিকই থাকব। যারা ধূমপানকে খারাপ মনে করতো, তাদের নিয়ে হাসতাম। কিন্তু এখন অসুস্থ হওয়ার পর বুঝতে পারছি আমি আসলে ভুল ছিলাম। এটা সত্যিই একটা ভয়ের বিষয়।”

এই ধরনের করুণ গল্প ঠেকাতেই যুক্তরাজ্য সরকার এই নতুন আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা করেছে। আইনটি অনুযায়ী, বর্তমানে ১৮ বছরের যেই সিগারেট ক্রয়সীমা আছে, তা প্রতিবছর বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ ২০২৭ সাল থেকে ধূমপানযোগ্য বয়সের সীমা এমনভাবে বাড়বে যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর আইনিভাবে তামাক কিনতে না পারে।

সরকার আশা করছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশকে ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ধূমপানের হার কার্যত শূন্যে নেমে আসবে। এক প্রজন্ম পরে তামাকপণ্য ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে। এটি হবে ব্রিটিশ সমাজের জন্য একটি রূপান্তরকারী মুহূর্ত।

লন্ডনের একটি যুবক্লাবের সদস্য আলফ্রেড, যার বয়স ১৪, বলছে—সে কখনোই তামাকজাত পণ্য কিনতে পারবে না। তবু সে আইনটি সমর্থন করে বলছে, “এর অংশ হতে পারলে খুব ভালো হবে। আমি কখনো ধূমপান করবো না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কারণ আমার মা এবং ভাই অনেক বেশি কাশি দেন। কারণ তারা ধূমপান করেছিলেন।”

আলফ্রেড ও তার বন্ধুরা বলছে, তারা কখনো ধূমপান করেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের প্রজন্মের মধ্যে ধূমপানকারীর সংখ্যা কমেছে। তবে তরুণদের মধ্যে ভ্যাপিং বা ই-সিগারেটের ব্যবহার বেড়েছে।

আলফ্রেড মনে করে এর পেছনে বাজারজাতকরণ কৌশল বড় কারণ। তিনি বলেন, “অনেক ধরনের ভ্যাপ আছে। প্রায় পুরোটা সময় সিগারেট একই রকম থাকে, কিন্তু ভ্যাপের অনেক ফ্লেভার আছে। তাই তারা মাঝেমধ্যে ভিন্ন স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে এবং হয়তো সেটি পছন্দ করতে পারে।”

এই কারণে নতুন আইন তরুণদের জন্য ভ্যাপিং সংক্রান্ত মার্কেটিংও বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে। সরকারের লক্ষ্য, ধূমপান ও ভ্যাপিং সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কিছু নিষিদ্ধ করা।

একই সময়ে, অস্ত্রোপচারের পর ধূমপান মুক্ত জীবনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গ্যারি। তিনি ধূমপান ছাড়ার একটি সফল কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্দেশ করে গ্যারি বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলছি—কেন নিজের জীবন বিপন্ন করছো? আমার বয়স যখন কম ছিল, তখন আমি শুরু করেছিলাম। তখন যদি এটা কম পাওয়া যেত, তাহলে আজ আমি এখানে থাকতাম না।”

এই প্রস্তাবিত আইন ইতিমধ্যে হাউজ অফ কমন্সে পাশ হয়েছে এবং বর্তমানে তা হাউজ অফ লর্ডসে বিবেচনাধীন। আইনটি পাশ হলে, ব্রিটেন ২০২৭ সাল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক নেতৃত্বে চলে আসবে।

শেখ ফরিদ 

×